দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত শেখ আনছার আলী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ফরহাদ গাজী (৫০) এবং মাহাবুব শেখ (৩২) কে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খানজাহান আলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন মাতব্বর খুলনা গেজেটকে বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত উপরোক্ত দুই আসামীকে মামলার অধিকতর তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড না-মঞ্জুর করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ প্রদান করেন।
২৬ মার্চ খানজাহান আলী থানা পুলিশ দিঘলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় শেখ আনছার আলী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নং আসামী ও দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফরহাদ গাজী (৫০) ও বারাকপু ইউনিয়ন যুবলীগের ৪ নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও মামলারভূক্ত ১৮ নং আসামী মাহাবুব শেখ (৩২) কে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
ফরহাদ গাজী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী জাকির হোসেনের চাচাতো ভাই। আর মাহাবুব শেখ গাজী জাকির হোসেনের ভাগনে।
ফরহাদের স্ত্রী শাহানা বেগম খুলনা গেজেটকে বলেন, আনছার শেখ নিহত হওয়ার ১দিন পর আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় আমার স্বামী জোহরের নামাজ পড়ে বাসায় বসে ছিলো।
তিনি বলেন, আমার স্বামী নির্দোষ। তিনি এই হত্যার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এক সময় আনছার শেখ আমার স্বামীকে ভুল বুঝিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইউপি চেয়ারম্যান আমার ভাসুর গাজী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। পরবর্তীতে ভূল বুঝতে পেরে আমার স্বামী তার গ্রুপ থেকে বের হয়ে আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আনছার এবং তাঁর সহযোগীরা আমার স্বামীর উপর ৩ বার হামলা চালিয়েছে। এবং ফোনে নানা ধরনের ভয়-ভীতি এবং হুমকি দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন প্রতিহিংসাবশতঃ আমার স্বামীকে আনছার শেখ হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। আমি আমার স্বামীর দ্রুত মুক্তি চাই।
প্রসঙ্গতঃ ২৪ মার্চ খানজাহান আলী থানার শিরোমনি লিন্ডা ক্লিনিকের সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয় দিঘলিয়ার বারাকপুর বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আনছারউদ্দিন। এ সময় তিনি লিন্ডা ক্লিনিকের পার্শবর্তী মসজিদুল আকসা জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। পহেলা রমজানের দিন প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শেখ আনছার উদ্দিন ছিলেন বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগনেতা গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। যার নামে দিঘলিয়া থানায় ৬ টি মামলা রয়েছে। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে বারাকপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৯৮৮ ভোটে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজী জাকির হোসেনের কাছে হেরে যান। এ ছাড়া সন্ত্রাসী হামলায় নিহত গাজী জাকির হোসেনের শূন্য হওয়া চেয়ারম্যান পদে ২০২২ সালের ২ নভেম্বর উপ- নির্বাচনে ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার প্রার্থীতা বাতিল হয়।
আনছার শেখ নিহত হওয়ার একদিন পর তার ছেলে তানভীর শেখ বারাকপুর ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান ও দিঘলিয়া উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলকে প্রধান আসামী করে ২৩ জনকে এজাহারভূক্ত এবং অজ্ঞাত ৭/৮ কে আসামী করে খানজাহান আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
খুলনা গেজেট/কেডি