১১ বছর পর ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে ফিরেছে কাঞ্চনমালা। ৪ মেয়ের দরিদ্র দিনমজুর পিতা আলমগীর মণ্ডল তার দ্বিতীয় কন্যাকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকার এক বাসায় কাজ করতে রেখে আসেন ২০১২ সালে। তখন কাঞ্চনমালার বয়স মাত্র ৬ বছর। এরপর সে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আর ফেরা হয়নি বাড়িতে। দেখা হয়নি বাবা-মার সঙ্গে। সেই থেকে সে নিখোঁজ ছিল।
কাঞ্চনমালার বাবা আলমগীর মন্ডল জানান, আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাই। অভাবের সংসার ৪ মেয়ে। বড় মেয়ে ডায়রিয়ার মারা যায়। দ্বিতীয় মেয়ে কাঞ্চনমালাকে রাজধানীতে এক বাসায় কাজে দিই। সে সেখনে থেকে পালিয়ে যায়। অনেক খুঁজেছি এর মধ্যে ১১ বছর পার হয়েছে। না পেয়ে তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মানিকগঞ্জের দেওয়ান আবু ইলিয়াস ও সুরাইয়া দেওয়ান তাকে খুঁজে পায়। তাদের ৩ ছেলের সাথে আমার কাঞ্চনমালা বড় হতে থাতে সেখানে। তারাই আমাদের খুঁজে বের করে যোগাযোগ করে। বুধবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় আমাদের কাছে ফেরে কাঞ্চনমালা তাতে আমরা খুব খুশি ।
হরিণাকুন্ডুর বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট কর্মকর্তা ব্যাংক কর্মকর্তা আসাদুর রহমান জানান, তার এক সহকর্মী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় কাজ করেন। কাঞ্চনমালার পালক বাবা-মা ওই সহকর্মীর পরিচিত। তারা মেয়েটির বাড়ি হরিণাকুণ্ড জানায়। পরে তাদের সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে কথা হয়। আমি মেয়েটির কাছে গ্রামের নাম জানতে চাইলে হরিণাকুণ্ডের বোয়ালমারি ও বোয়ালখালি ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছিল না। আমাদের এখানে বোয়ালিয়া নামে একটি গ্রাম আছে। আমি ওই গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আলম মণ্ডল নামের এক দিনমজুরের মেয়ে কয়েক বছর আগে ঢাকায় কাজ করতে যায়। পরে সে হারিয়ে যায়। ২৮ মার্চ মেয়েটির বাবা-মাকে মানিকগঞ্জে নেওয়া হয়। মেয়েটি তার বাবা-মাকে চিনতে পারে।
কাঞ্চনমালার পালক মা সুরাইয়া দেওয়ান জানান, কাঞ্চনমালা মানিকগঞ্জের একটি রাস্তার ধারে বসে কাঁদছিল। আমরা তাকে বুকে তুলে নিই। আমাদের কোনো মেয়ে নেই। আমাদের ৩ ছেলে । তাকে মা বলেই ডাকতো কাঞ্চনমালা। সেই থেকে আমরা কাঞ্চনমালার আসল ঠিকানার খোঁজ করতে থাকি। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তার মাধ্যমে ওর ঠিকানা খুঁজে পাই। এক দিকে খুব আনন্দ হচ্ছে। অন্যদিকে কষ্টটা বলে বোঝাতে পারবো না। ও আমাদের মেয়ের মতো বড় হয়েছে।
মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে কাঞ্চনমালা
কাঞ্চনমালা আনন্দে আত্মহারা। দীর্ঘদিন পরেও সে তার বাব-মাকে চিনতে পেরেছে। সে জানায়, পরিবারের আপনদের খুঁজে পাবে ভাবিনি। মাত্র ৬ বছর বয়সে হারিয়ে যাই। এখন আমার বয়স ১৭ বছর। এতদিন পরে যে বাবা-মা-বোনদের দেখবো সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার না। আমি কখনই আমার পালিত বাবা-মাকে ভুলবো না। তারা আমাকে নিজের মেয়র মতো করে মানুষ করেছে। তারা আমাকে স্কুলে ভর্তি করেছে।
খুলনা গেজেট/ এসজেড