খুলনায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য মিলছে ১০০ টাকায় মুরগির কাটা মাংস ও ২০০ টাকায় গরুর মাংস (হাড়-চর্বি ছাড়া)। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য স্বল্প পরিসরে কেনার সুবিধার্থে এই উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা পাবলিক কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা।একইসঙ্গে স্বল্প আয়ের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে মাংস বিক্রি করতে বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন তারা। গত ২৬ মার্চ শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে রমজান মাসজুড়ে।
বয়রা বাজার এলাকায় ফুটপাতে ছোলা-মুড়ি, ভাজা বিক্রি করেন ফাতেমা বেগম ও তাঁর স্বামী সোবহান হোসেন। দুই মেয়েসহ চারজনের সংসার তাঁদের। খুলনা পাবলিক কলেজের সামনে স্বল্পমূল্যের মাংসের দোকানে দাঁড়িয়ে কথা হয় ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা ইনকাম হয়। তা দিয়ে চাল-ডাল, মাইয়াদের লেহাপড়া খরচ দিয়ে ভালোমন্দ কিছু খাওয়া হয় না। ম্যালা দিন পর গরুর গোশ কিনে ভালো লাগতেছে।’
‘মাইয়ার স্কুলের রেজাল্ট দেওয়ার পর ডিসেম্বরে আধা কেজি গোশ কিনছিলাম। এরপর আর গোশের দোকানের কাছেও যাই নাই। দুপুরে ২০০ টাকায় গোশ বেচতেছে হুইনা আইসা দেহি সত্যি। চার মাস পর মাইয়াগে আজ গরুর গোশ খাওয়ামু।’
আয়োজকরা বলছেন, সীমিত আয়ের মানুষের জন্য লোকসানে মুরগি ও গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে এই কার্যক্রম চলবে। এদিকে সীমিত পরিসরে মাংস কিনতে পেরে খুশি সাধারণ মানুষ।
বুধবার (২৯ মার্চ) নগরীর বয়রায় খুলনা পাবলিক কলেজের সামনে দেখা যায়, ৩০০ গ্রাম গরুর মাংস (হাড়-চর্বি ছাড়া) ২০০ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম মুরগির মাংস (গলা, পা, চামড়া, কলিজা ছাড়া সম্পূর্ণ প্রসেসিং করা) ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতি প্যাকেটে সারপ্রাইজ হিসেবে ২০-৩০ গ্রাম বেশি মাংস ছিল।
ক্রেতারা বলছেন, ৪০০ বা ৭০০ টাকা দিয়ে মাংস কিনে খাওয়া কষ্টের। সবকিছুর দাম বেড়েছে। যা আয় হয় তা দিয়ে তরিতরকারি, চাল, বিদ্যুৎ বিল, কাঠ, তেল কিনতে গেলে মাছ-মাংস কেনা সম্ভব হয় না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেনা কষ্টকর। তবে এখানে যে কোনো পরিমাণে মাংস কেনা যাচ্ছে। ১০০ টাকায় মুরগির মাংস আর ২০০ টাকায় গরুর মাংস। সাধ্য অনুযায়ী কিনতে পারছি। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। বাজারের ব্যবসায়ীরাও এমন উদ্যোগ নিলে আমাদের জন্য উপকার হতো।
খুলনা পাবলিক কলেজের সাবেক ছাত্রদের সংগঠন এক্সকেপিসিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. আল মাসুম বিল্লাহ বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম শুরু হয়। সাবেক ছাত্রদের অর্থায়নে আমাদের ফান্ডিং হয়। করোনাকালীন সময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ নানা কাজ করা হয়েছে। সামাজিক কাজগুলো আমরা করছি। এবার আমাদের ভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। সবকিছুর দাম বাড়তি, মাংস তো স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম করে মাংস বিক্রি হয়। ঢাকায় বেশকিছু লোকজন এমন কাজ করছে। খুলনার কোনো ব্যবসায়ী এই উদ্যোগ নেয়নি। তখন আমরা চিন্তা করলাম যে রোজার মাসে স্যাম্পল হিসেবে এই কাজটা করি। আমাদের দেখাদেখি ব্যবসায়ীরা যদি উদ্যোগী হয় তাহলে মানুষ সাধ্যমতো মাংস কিনে খেতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ২৬ মার্চ প্রথম দিন আমাদের ১ হাজার ৩৮০ টাকার মতো ভর্তুকি গেছে। হাড়বিহীন গরুর মাংস ৮৫০ টাকা কেজি দরে কিনে আমরা ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তারপরও ২০-৩০ গ্রাম বাড়তি দিয়েছি। আমরা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিক্রি করছি না, মডেল হিসেবে এই প্রজেক্ট করছি। সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও সহযোগিতা করছেন।
খুলনা পাবলিক কলেজের সাবেক ছাত্র আব্দুল্লাহ আল তোহা বলেন, একটা মুরগি কিনতে গেলেই ৪০০ টাকা আর এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা। সীমিত আয়ের লোকজন মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এজন্য খুলনা পাবলিক কলেজের সাবেক ছাত্রদের সংগঠন এক্স কেপিসিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের উদ্যোগে ২৬ মার্চ থেকে সীমিত পরিসরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ যাতে হাতের নাগালের মধ্যে মাংস পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত চার দিন সোনাডাঙ্গা আলীর ক্লাব মোড়, মুজগুন্নি ও খুলনা পাবলিক কলেজের সামনে এই মাংস বিক্রি করা হয়েছে। ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের মাংস বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লোকসান হচ্ছে। বুধবার ৩ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের ভালোবাসা। সম্মান দেখিয়ে স্বল্প আয়ের ভাই-বোনেরা এখানে কিনতে আসছেন। সংগঠনের সদস্যরা নিজস্ব অর্থায়নে এই ভর্তুকি দিচ্ছেন। সংগঠনের সদস্য মাসুম, বাপ্পি, ফারহান, দোলন, সাগর, সাজ্জাদ, জাহিদ, নাহিদ, সালাউদ্দিনসহ অনেকেই কষ্ট করছেন। এই কার্যক্রমকে উৎসাহ দিতে খুলনা পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মোহাম্মদ শামীমুল আহসান শামীমসহ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা পাবলিক কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মাহামুদ কবীর দোলন বলেন, এই কাজে আমরা ভালো রেসপন্স পেয়েছি। প্রচারণা ছাড়াই মানুষ এসে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। দিনমজুর, রিকশাচালক, ইজিবাইক চালক, ভাঙারি বিক্রেতা এমন স্বল্প আয়ের মানুষ কিনছেন। স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে সীমিত পরিসরে কিনতে পারে এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।
খুলনা গেজেট/এমএম