বর্তমানে গভর্নিং বডি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা অনুযায়ী বাংলাদেশি নাগরিক যে কেউ যতবার সম্ভব ততবার সভাপতি হতে পারেন; কিন্তু তাতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত গভর্নিং বডি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা অনুযায়ী একনাগাড়ে দুই মেয়াদের বেশি সভাপতি হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি আর সভাপতি হতে হলে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক থাকতে হবে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘স্কুল ম্যানেজিং কমিটি এবং গভর্নিং বডি প্রবিধানমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। ইতিমধ্যে একাধিক সভা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কাজ শেষ করেছে। খুব শীঘ্রই তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। ভেটিং শেষে ফেরত আসার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।’
সর্বশেষ ২০০৯ সালে গভর্নিং বডি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। এবার সংশোধিত প্রবিধানমালার নাম দেওয়া হচ্ছে ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২৩’।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক নির্ধারণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়ার জন্য এতদিন কোনো যোগ্যতা নির্ধারণ করা ছিল না। এতে অনেক বিদ্যালয় ও কলেজেই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা ব্যক্তিরাও ক্ষমতার জোরে সভাপতি পদে আসীন হতেন। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মান উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ছিল। এজন্যই সম্প্রতি প্রবিধানমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় যেসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে: এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি মাধ্যমিক ও দুটি কলেজ মিলিয়ে মোট চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন। এছাড়া বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো মুহূর্তে কমিটি ভেঙে দেওয়ার এখতিয়ারও রাখা হচ্ছে। সেখানে শিক্ষা বোর্ড প্রয়োজন মনে করলে দুই বছর মেয়াদী নিয়মিত কমিটিও দিতে পারবে। আর সরকারি কর্মকর্তারা তার নিজ দপ্তর থেকে অনাপত্তি নিয়েও কমিটিতে সভাপতি হতে পারবেন।
প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় সভাপতি পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করার দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মহলের পরামর্শে তা আপাতত উচ্চ মাধ্যমিক করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বর্তমান প্রবিধানমালা অনুযায়ী, প্রথমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি এবং কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত সদস্য সাত দিনের মধ্যে সভাপতি নির্বাচনের জন্য সভা ডাকেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান সদস্য সচিব হিসেবে সে কাজগুলো সমন্বয় করেন। সভার সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি পদে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় কোনো সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে সাধারণত সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে সভাপতি পদে তিনজনের নামের প্রস্তাব পাঠান। বোর্ড তাদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি পদে অনুমোদন দেন। সাধারণত এক নম্বরে যার নাম পাঠানো হয় তাকেই সভাপতি পদে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় শিক্ষাবোর্ড।
খুলনা গেজেট/কেডি