খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৬ মে, ২০২৪

Breaking News

  চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রাকের সঙ্গে ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত
  রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২
সম্রাটের বন্ধুর স্ত্রী সীমার স্বীকারোক্তি

বস্তাবন্দী লাশ গাড়িতে তুলে সটকে পড়ে মমিন

গেজেট ডেস্ক 

ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিকিম কোম্পানির গাড়ি চালক মো. সম্রাট হোসেনকে (২৯) হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন সম্রাটের বন্ধু মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুন। তিনি পুলিশকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্রাট আমার বাসায় আসে। আমাকে বলে তার মাথা ধরেছে। এ কথা বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমার স্বামী মমিন ওষুধ আনতে গেলে সম্রাট আমার শরীরে হাত দেয়। আমি রাগে ও ক্ষোভে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় ও গোপনাঙ্গে আঘাত করলে মারা যায়। পরে আমার স্বামী বাসায় ফিরলে লাশ বস্তায় ভরে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করার পর আমার স্বামী আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে শিলাইদহে গাড়ি রেখে সটকে পড়ে।’

নিখোঁজের দুইদিন পর ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী শিলাইদহ ঘাট এলাকা থেকে সম্রাট হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয় বিলাসবহুল প্রাডো জিপ গাড়িটি। শনিবার বেলা ১১টায় মরদেহ উদ্ধার ও প্রাডো জিপ গাড়িটি জব্দ করা হয়। সম্রাট ঈশ্বরদী উপজেলার মধ্য অরণকোলা আলহাজ্ব ক্যাম্প এলাকার বক্কার হোসেনের ছেলে।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্রাটের বন্ধু একই উপজেলার বাঁশেরবাদা গ্রামের আব্দুল মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকে (৩০) আটক করেছে। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন সম্রাটের বন্ধু মমিন।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পদ্মার পাড়ে পড়ে থাকা গাড়ি থেকে সম্রাট খান নামের যে যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বাঁশেরবাদা এলাকায়। বাঁশেরবাদা থেকে কুমারখালীর ঘটনাস্থলের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। বাড়িতে হত্যার পর লাশ গুম করার উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে গাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে পদ্মার পাড়ে ফেলে যাওয়া হয়।

সীমার বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, বাড়িতে হত্যার পর সম্রাটের লাশ লুকানোর জায়গা পাচ্ছিলেন না মমিন ও সীমা। পরে সম্রাটের লাশ বস্তাবন্দী করে তাঁরা ফেলে দেওয়ার জন্য গাড়িতে করে বের হন। যে গাড়িতে করে সম্রাটের লাশ নেওয়া হয়, সেটা সম্রাট চালাতেন। লাশ নিয়ে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন মমিন। কিছুক্ষণ ওই অবস্থায় গাড়ি চালান তিনি। আশপাশে কোনো উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে স্ত্রীকে বাড়িতে নামিয়ে মমিন আবার গাড়ি নিয়ে বের হন।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, নিহত সম্রাটের পরিবার ও গাড়ির মালিকের তথ্যের ভিত্তিতে বাঁঁশেরবাদা এলাকায় মমিনের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী সীমাকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। পলাতক মমিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্রাটের বাবা আবু বক্কার বলেন, আমার ছেলে সম্রাট তার বন্ধু মমিন ও মমিনের স্ত্রী সীমাকে চাকরি দিয়েছিল। পরে তাদের চাকরি চলে যায়। আবারও তাদের শ্রমিক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেয়। আমার ছেলে নিকিমত কোম্পানিতে কয়েকটি গাড়ি ভাড়াও দিয়েছিল। প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকার বিল তুলতো। কৌশলে আমার ছেলেকে তারা স্বামী-স্ত্রী ডেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করছি। তিনি বলেন, আমার সন্তান হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

নিহত সম্রাটের মামা শামসুল হকের ভাষ্য, সম্রাট পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে। সম্রাট খান গত সাত বছর ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে একটি কোম্পানির হয়ে ভাড়ায় গাড়ি চালান। বৃহস্পতিবার সকালে কাজে বের হন তিনি। ওই দিন রাত ৯টার দিকে তাঁর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের শেষ কথা হয়। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। তাঁর ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাতেই সম্রাটকে খোঁজাখুঁজি করেন তাঁরা। ঘটনাটি তাঁরা ঈশ্বরদী থানার পুলিশকে জানান।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) জিয়াউর রহমান জানান, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রসাটমের নিকিমত কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন সম্রাট হোসেন। বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সম্রাট তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সারাদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার খোঁজ না পেয়ে ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

শনিবার সকালে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট এলাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি গাড়ি দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাডো জিপের ভেতর থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজনেরা গিয়ে মরদেহটি সম্রাটের বলে সনাক্ত করেন।

এর আগে বিভিন্ন সূত্রে ধরে পুলিশ ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকার নিখোঁজ সম্রাটের বন্ধু আব্দুল মমিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার স্ত্রী সীমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, সম্রাটের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে বন্ধু মমিন ও তার স্ত্রী সীমা মিলে সম্রাটকে হত্যা করেছেন।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদীপুর ইউপির গ্রাম পুলিশ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি দুইদিন ধরে একটি দামি গাড়ি শিলাইদহ নদীপাড়ে দাঁড় করানো আছে। গাড়িটির কাছে যাওয়ার পর মানুষ পঁচা গন্ধ বুঝতে পেরে মেম্বারসহ পুলিশ প্রশাসনকে জানাই।

সাদীপুর ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, গাড়ির অদূরে কলাবাগানে কাজ করার সময়ে একজন চাষি একটি চাবি পড়ে থাকতে দেখে আমার কাছে এগিয়ে আসেন। চাবিটি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটির হবে এমন ভেবে স্থানীয়দের সাথে করে দরজা খুলতে গিয়ে দেখি দরজা আনলক ছিল। দরজা খুলেই জুতাসহ পা দেখতে পেয়ে দরজা বন্ধ করে পুলিশে খবর দেই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রাডো গাড়িটির মালিক আনিসুর রহমান বলেন, আমার কয়েকটি গাড়ি রূপপুর প্রকল্পে বিভিন্ন কোম্পানিতে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। তিন বছর ধরে সম্রাট আমার একটি গাড়ি চালায়। বৃহস্পতিবার রাতে ওকে ফোনে না পেয়ে খোঁজখবর শুরু করি। পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেও তার কোনো সন্ধান মেলাতে না পেরে সন্দেহ হয়। শুক্রবার সারারাত বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নেওয়ার পর জানতে পারি গাড়িটি শিলাইদহ ঘাট সংলগ্ন পাড়ে দাঁড় করানো আছে। পরে গিয়ে জানতে পারি গাড়িতেই ড্রাইভার সম্রাটের লাশ রয়েছে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!