‘রাত পার হলেই রোজা। ঘরে তেমন কোন বাজার নেই। তাই তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে আছি যাত্রীর আশায়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। চার সদস্যর পরিবার। এ আয় দিয়ে সংসার চলে না। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। মাছ-মাংস কিনবো কিভাবে। বর্তমানে প্রতিকেজি পোল্ট্রি মুরগির পায়ের কেজি ২২০ টাকা। পরিবারের সদস্যরা যে কতদিন মাংসের স্বাদ পায় না তা জানা নেই।’ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে হতাশ কণ্ঠে বললেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার পাটরপাড়া গ্রামের মোঃ রবিউল মোল্লা (৩৭)।
মোঃ ইমন (৩৫)। তিনিও ভ্যানচালক। রবিউলের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীর আশায়। সুরশাইল গ্রামের একটি বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকেন। হাতের উপর সংসার। তাই রোজাকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা মাথায়। ঘর থেকে বের হয়েছেন আয়ের আশায়।
মোঃ ইমন বলেন, ‘রোজায় ইফতারী ও সেহরীতে পরিবারের সদস্যদের একটু বাড়তি ও ভাল খাবারের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে মাংসের প্রতি চাহিদা বেশী। কিন্তু কিনব কিভাবে। পোল্ট্রি মুরগি প্রতিকজি ২৫০ টাকা। কক, সোনালী ও লেয়ার মুরগি প্রতিকজি ৩৮০ টাকা এবং দেশী মুরগি প্রতিকেজি ৬০০ টাকা। গরুর মাংস ৮২০ টাকা ও খাসির মাংশ প্রতিকেজি ১ হাজার ১০০ টাকা। তাই মাংসের স্বাদ পেতে মাঝে মধ্যে পোল্ট্রি মুরগির পা কিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেতাম।
তার কেজিও বর্তমানে ২২০ টাকা। ঠ্যাং কেনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুরগি কিনলে আস্ত কিনতে হয়। একটি মুরগির ওজন ২-৩ কেজি। একটা আস্ত মুরগী কিনতে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু আমাদের মতো নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য একটা আস্ত মুরগী কেনা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তিনি বলেন, বাজার থেকে মুরগীর পা কেনা যায়।
মোঃ মিকাইল সরদার (৩০) ও মোঃ বাবুল সরদার (৪০)। দুইজনের বাড়িই পাটরপাড়া গ্রামে। পেশায় ভ্যানচালক। তারাও জানালেন একই আক্ষেপের কথা।
শুধু রবিউল, ইমন, মিকাইল ও বাবুল নয়। এরকম আফসোসের কথা জানিয়েছেন এ উপজেলার অসংখ্য নিম্ম ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
কালিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মামুন সরদার জনান, বর্তমানে মাছ ও মাংসের যে অগ্নিমূল্য তাতে নিম্ম আয়ের মানুষ নয় মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষও হিমশিম খাচ্ছেন।
মুরগি ব্যবসায়ী আনোয়ার গাজী ও মিজান শেখসহ অনেকে জানান, বর্তমানে মোকামে মুরগির দাম চড়া। হোটেল-রেস্তোরায় বিক্রি করা মুরগির ঠ্যাং আমরা কিনে রাখি ওগুলো গরীব মানুষেরা কিনে খায়।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেসা বলেন, ‘রমজান ঘিরে আমাদের বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। এরপরও কেউ অভিযোগ করলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব।’
খুলনা গেজেট/ এসজেড