খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

রমজানকে সামনে রেখে ৬পণ্যে কারসাজি, দাম বাড়ছেই

 নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে তেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর ও পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। রোজার কয়েকদিন বাকী থাকতেই এসব পণ্যের চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই এসব ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট তৈরী করে দাম বাড়িয়ে দেন।  এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এতে উদ্বেগ বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানির দাম, ডলার ও এলসি সঙ্কটে দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের উপায় নেই। ইতোমধ্যে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যেরই দাম এক মাস আগের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলো বেশি।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। তাই সংকট তৈরি হবে না। একই আশ্বাস দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীও ভোক্তাদের একসঙ্গে বেশি পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া সরকারের একাধিক মন্ত্রীও এবার রোজায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছিলেন।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন। এক বছর আগে একই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন।

এলসি খোলার পর বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। গত তিন মাসে ছোলার আমদানি কমেছে ৫০%। তবে চিনির আমদানি স্বাভাবিক আছে। তারপরও দাম বাড়ছেই।

আমদানি কমেছে খেজুরের। গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয় ২২ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস এবং পরবর্তী রোজার এক মাসের চাহিদা অনুযায়ী ওই ছয়টি পণ্য আমদানিতে ১৫৩ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। আর শুধু রোজার এক মাসের চাহিদা পূরণে এসব পণ্য আমদানিতে প্রয়োজন ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপে এবার ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারেননি।

ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে শতকরা ২৫ ভাগ। আগে এক হালি মুরগির ডিমের দাম ছিল ৩৬ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮টাকায়। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২১০ টাকা। একইভাবে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ।

খুলনার সান্ধ্য বাজারের মাছ বিক্রেতা রমজান আলী জানান, মাছের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। রোজায় আরও বাড়বে। কম দামের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়াও নাগালের বাইরে। সরবরাহ কম তাই মাছের দাম বাড়ছে।

একই বাজারের মুরগি বিক্রেতা  ইমরান হোসেন বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে, গত একদিনে বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। সোনালী মুরগির দাম এক সপ্তাহে ২৮০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে ৩২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ডাকবাংলো মোড়ের ফল বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, কেজিতে খেজুরের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর নিম্নমানের খেজুর ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এবার তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। ‘বড়ই’ খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। যা গত বছর রমজানের আগে বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকায়।

ক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, রোজা আসছে, তাই কিছু জিনিস কিনতে এসেছিলাম। দাম শুনে অবাক হচ্ছি। ছোলার কেজি ১০০ টাকা এবং চিনির কেজি ১২০ টাকা। এবার রোজার মাস কীভাবে পার করব সেই চিন্তাই করছি।

রাকিব নামের এক ক্রেতা বলেন, কয়েক দফায় সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন বাড়ছে পাম অয়েলের দাম। এক সপ্তাহ আগেও ১৩০-১৩২ টাকা লিটারে বিক্রি হওয়া পাম অয়েল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। রোজা সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

রোজা আসলেই কেন বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, দাম বাড়ার প্রথম কারণ হচ্ছে যেখান থেকে আমরা আমদানি করি তারাও রোজা আসলে দাম বাড়ায়। ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল দিচ্ছে না। এখন স্টক করে রেখেছে। দাম বাড়িয়ে ৪/৫ দিন পরে বাজারে ছাড়বে। সারা পৃথিবীর মানুষ জানে রমজান আসলে মুসলমানদের কী কী পণ্য অতিরিক্র লাগে। ছোলা সারা বছর কেউ খাবে না। কিন্তু রোজার সময় বিক্রি হবে, এটা সবাই জানে। তখন দামটা বেড়ে যায়। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে রমজানে আমাদের শ্রমিকদের বেতন, বোনাস দিতে হয়। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে আমাদের যে এজেন্সিগুলো আছে যেমন ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্সসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের টাকা দেয়ার জন্যে। চার নম্বর সমস্যা হচ্ছে চাহিদার তুলনায় জোগান বেড়ে যায় তখন পণ্যের দামও বেড়ে যায়।

এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, তারপরও রমজানে ভোক্তারা যাতে ন্যায্য মূল্যে পণ্য কিনতে পারে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখব। ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকলে রমজান মাসের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় ৬টি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেবে সেই দাম প্রত্যেক দোকানে টানিয়ে রাখা হবে। যাতে কোনোভাবেই ভোক্তারা প্রতারিত না হয় এবং ব্যবসায়ীরাও সুযোগ নিতে না পারে।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, আমার মনে হয় যতদিন পর্যন্ত আমদানি করতে হবে। ততদিন পর্যন্ত রমজান এলে পণ্যে দাম কমার সুযোগ নেই।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!