হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশের পর এক মাসে ভারতের আদানি গ্রুপের সম্পদ কমেছে ১২ লাখ ১০ হাজার ৭১২ কোটি রুপি। এ সময়ে গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদ ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৯ কোটি রুপি কমেছে। গত শুক্রবার তিনি আরও ১৩ হাজার ১৮৫ কোটি রুপির বাজার মূলধন হারিয়েছেন। এতে আদানি বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় আরও পিছিয়ে ৩০তম স্থানে পৌঁছান। ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে শনিবার দ্য ন্যাশনাল নিউজ এসব তথ্য জানায়।
গত ২৪ জানুয়ারি আদানি গ্রুপের ‘জালিয়াতি ও কারচুপি’ নিয়ে নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্ট প্রকাশ করে। এর পরই বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী শিল্পোদ্যোগীর সাম্রাজ্যে ধস নামা শুরু হয়। আদানি গ্রুপের সবক’টি শেয়ারের টানা দরপতনের ফলে মোট বাজার মূলধনের পরিমাণ ক্রমাগত কমতে থাকে।
হিনডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার আগে ভারতের গুজরাট রাজ্যের ৬০ বছরের শিল্পপতি গৌতম আদানি ছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি। তাঁর বিরুদ্ধে আনা শেয়ারবাজারে জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। গত বুধবার আদানি গ্রুপের বাজার মূলধন কমে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ কোটি রুপির নিচে নেমে যায়।
আদানি গ্রুপের ১০ সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আদানি গ্রিন এনার্জির। এর শেয়ারের বাজারমূল্য কমে গেছে ৮৪ শতাংশ। দরপতনের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ার। দরপতন যথাক্রমে ৮৩ ও ৮১ শতাংশ। গোষ্ঠীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সংস্থা বলে পরিচিত আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারমূল্য কমেছে ৬৭ শতাংশ।
ভীত বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে আদানি গ্রুপ বারবার আশ্বাস দিয়েছে। তারা হিনডেনবার্গের রিপোর্ট ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পেতে কিছু বড় অঙ্কের ঋণও পরিশোধ করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়াও শুরু করেছে। কিন্তু কিছুতেই দরপতন ঠেকানো যায়নি।
গত বছরের এপ্রিল থেকে গৌতম আদানির সম্পদ লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। কয়েক মাসে তার মোট সম্পদে যোগ হয় ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৫ কোটি রুপি। এতে আদানি সম্পদের পরিমাণের হিসাবে বিল গেটস ও ওয়ারেন বাফেটের মতো ধনকুবেরদেরও ছাড়িয়ে যান। বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হিসেবে তিনি ২০২২ সাল শেষ করেন (সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ছিলেন)।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, ভারতের শেয়ার বাজারের ইতিহাসে রেকর্ড ধসের সাক্ষী আদানি গ্রুপ। এক সময়ে রিলায়েন্সের মতো নামি সংস্থাকেও শেয়ার বাজারে টপকে গিয়েছিল তারা। কিন্তু যত দ্রুত উত্থান হয়েছিল, তার থেকেও দ্রুত পতন হয়েছে। ভারতের প্রযুক্তিগত বিশ্নেষক রোহান শাহ জানান, আদানি গ্রুপের বাজার মূলধন এখন তার সর্বোচ্চ পর্যায়ের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ কম।
আদানিকে কেন্দ্র করে এক মাস ধরে ভারতের রাজনীতির মাঠও উত্তাল। সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধীরা এ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল করেছেন। তাঁরা আদানির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। আদানি ইস্যুতে সংসদে অচলাবস্থাও সৃষ্টি হয়। তবে আদানিকে নিয়ে হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট নিয়ে বরাবরই চুপ থেকেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিষয়টির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁরা মোদির বিরুদ্ধে আদানি-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ করে আসছেন।