খুলনা, বাংলাদেশ | ১লা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
  এবারের ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ শুরু হবে সকাল ৯টায়
ফুল-ফসলে ভ‌রে উ‌ঠে‌ছে দেড় হাজার হেক্টর জ‌মি

খুলনায় প‌তিত জ‌মি‌তে কৃ‌ষি অর্থনী‌তির বড় সম্ভাবনা

ত‌রিকুল ইসলাম

খুলনার বন্ধ থাকা শিল্পকারখানা, বিভিন্ন সরকারী অফিস, রাস্তার পাশ, স্কুল কলেজের চত্বরসহ ব‌্যক্তিমা‌লিকানাধীন প‌তিত জ‌মি ফুল-ফস‌লে ভ‌রে উ‌ঠে‌ছে। সূর্যমুখী-স‌রিষার হলু‌দ আভার পাশাপা‌শি দৃশ‌্যমান শাক-সব‌জি। কৃ‌ষি অ‌ধিদপ্ত‌রের সহায়তা ও পরাম‌র্শে শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, সরকারী দপ্তরের কর্মচারী আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিচর্যায় অব্যহৃত জমি এখন কৃষি অথনীতির বড় সম্ভবনায় পরিণত হয়েছে। প্রতি‌নিয়ত ফস‌লে ভ‌রে উঠ‌ছে নতুন কোন প‌তিত জ‌মি।

খুলনা জেলা কৃ‌ষি সম্প্রসারণ অ‌ধিদপ্তর সূ‌ত্রে জানা যায়, জেলার নয়‌টি উপ‌জেলাসহ শহ‌রে ১০ হাজার ৯৭৫ হেক্টর অনাবাদি পতিত জমি আছে । ই‌তোম‌ধ্যে এক হাজার চারশ’ ৩০ হেক্টর প‌তিত জ‌মি চা‌ষের আওতায় আনা হ‌য়ে‌ছে। সেখা‌নে শীতকালীন সব‌জি ট‌মে‌টো, ক‌পি, আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজসহ নানা জাতের শাক উৎপাদন করা হ‌য়ে‌ছে। বি‌ভিন্ন প্রতিষ্ঠা‌নে কর্মচারী-কর্মকর্তারা তা‌দের চা‌হিদা মি‌টি‌য়ে বি‌ক্রি ক‌রে লাভবান হ‌য়ে‌ছে।

এছাড়া বর্তমা‌নে সূর্যমুখী ও সরিষার আবাদ করা হ‌য়ে‌ছে। কিছু জ‌মি‌তে রবি ফসল রোপন করা হয়েছে। লাগা‌নো হ‌চ্ছে পেঁ‌পে, তরমুজ, পটলসহ নানা রক‌মের ফল-ফসল। বোরো ধানও আবাদ করা হয়েছে বেশ কিছু স্থানে।আরও জানা যায়, ২০২২ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ক্রিসেন্ট জুট মিলে ১২ বিঘা, খালিশপুর জুট মিলে ৩ বিঘা, দৌলতপুর ও প্লাটিনাম জুট মিলে ২ বিঘা, ইস্টার্নে ২০ শতক, আলিমে আড়াই বিঘা এবং স্টার জুট মিলের ১২ বিঘা জমি চাষের আওতায় আনা হয়। এসব জমিতে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ধনেপাতাসহ বিভিন্ন সবজি, তেল ও মসলাজাতীয় ফসলের আবাদ করা হয়। ফসল উত্তোলনের পরে তেলবীজ জাতীয় শস্যের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু স্টার জুট মিলের কিছু জমিতে বোরো ধান চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের আফিল, মহসীন ও অ্যাজাক্স জুট মিলের পতিত জমিতেও সবজি ও তেলজাতীয় শস্যের চাষ শুরু হয়েছে।

খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের স্কুলের অনেক পতিত জমি রয়েছে। যেখানে কোন দিন চাষ করা হয়নি। কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় এবার সেখানে ডাটা শাক, পেঁয়াজ ও আলু রোপন করা হয়। সেই সাথে কিছু সবজি চাষ করা হয়। এই সবজি বাগান থেকে স্বল্প মূল্যে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

খুলনার খালিশপুরের ক্রিসেন্ট জুট মিলের মধ্যে পতিত জমির পরিমান দুই হেক্টর। পাটকলটির আবাসিক এলাকার ফাঁকা জমিতে সূর্যমুখীর বীজ চাষ করা হয়েছে। অন্য জমিতে সরিষাসহ বিভিন্ন রবিশস্য লাগানো হয়েছে।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান খান মো. কামরুল ইসলাম বলেন, পাটকলের আবাসিক এলাকার ১২ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে। মিল চালু হলেও চাষাবাদে সমস্যা হবে না। এর বাইরে কারখানা এলাকায় ৩০০ পেঁপের চারা লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এক হাজার চারা লাগানো হবে। ফসল চাষের বিষয়টি মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খুবই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তাঁরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে প্রায় লাখ টাকার একটি তহবিল গঠন করেছেন। কৃষি বিভাগও সহায়তা করছে। উৎপাদিত ফসল তারা নিজেরাই কিনে নেবেন। তহবিল ঠিক থাকবে।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, এ উপজেলায় ৬১৯ হেক্টর পতিত জমি রয়েছে। তবে সব জমি চাষযোগ্য নয়। বিদ্যুৎ অফিস, হিমায়িত চিংড়ি ফ্যাক্টরী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নস্থানের ১৫ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনা হয়েছে। সূর্যমুখী, স‌রিষার, গমসহ বিভিন্ন ফসল লাগানো হয়েছে। এছাড়া পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের মাধ্যমে চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি যেয়েও প্রচারণা করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ এখানকার চাষযোগ্য জমি কিনে ফেলে রেখে অন্যত্র বসবাস করেন। তাদের ফেলে রাখা জমিতে চাষ করা কঠিন হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে প‌তিত জমিতে চাষের নির্দেশনা র‌য়ে‌ছে। নি‌র্দেশনা অনুযায়ী খুলনার বি‌ভিন্ন প্রতিষ্ঠা‌নসহ ব‌্যক্তি মা‌লিকানাধীন প‌তিত জ‌মি‌তে চাষাবা‌দের উ‌দ্যোগ নেয়া হয় । তা‌দের‌কে কৃ‌ষি দপ্তর থে‌কে সহায়তার মাধ‌্যমে চা‌ষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তিন মাস ধরে চাষের কাজ চলছে। আমরা জমি চাষ করে ফসল বোনার উপযোগী করে দিয়েছি। এছাড়া আমরা বীজ ও সার দি‌য়ে সহায়তা ক‌রে‌ছি। আর প্রতিষ্ঠা‌নের শ্রমিক-কর্মচারীরাই পরিচর্যা করছে।

কৃ‌ষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনার উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ব‌লেন, সরকা‌রের নি‌র্দেশনা অনুযায়ী প‌তিত জ‌মি আবা‌দের আওতায় আনা হ‌চ্ছে। চা‌ষি‌দের উদ্বুদ্ধের পাশাপা‌শি ট্রাক্টর দি‌য়ে জ‌মি চাষ ও বীজ-সার দি‌য়ে সহায়তা করা হ‌চ্ছে। ১৩ শতাংশ প‌তিত জ‌মি চা‌ষের আওতায় এ‌সে‌ছে। আমাদের কার্যক্রম চলমান র‌য়ে‌ছে। স্বল্পদি‌নের ম‌ধ্যে আরও কিছু প‌তিত জ‌মি চা‌ষের আওতায় আনা হ‌বে। পযায়ক্রমে আবাদযোগ্য শতভাগ পতিত জমিতে চাষাবাদ করা হবে।

খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আবাদযোগ্য কোন পতিত জমি রাখা যাবে না। সেই মোতাবেক ইতোমধ্যে ১৩ শতাংশ জমি আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই শতভাগ পতিত জমি চাষের আওতায় আনা হবে। এটা বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহি অফিসারসহ কৃষি অফিসারদের নিদেশ দেয়া হয়েছে। জুটমিল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পতিত জমিতে আবাদ করা হচ্ছে। বসতবাড়িতে পুষ্টিবাগান প্রকল্প দেয়া হচ্ছে। সার-বীজ দিয়ে সহযোগীতার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ভূমি সংকটের এই দেশে অযথা জমি ফেলে না রেখে কোন না কোন ফসল লাগানো অবশ্যই উচিত।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!