খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

মর্কিন কর্মকর্তার সফর : অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকারে জোর

গেজেট ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। মানবাধিকার সুরক্ষায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি ভিন্নমতাবলম্বীরা যাতে হেনস্তার শিকার না হয়, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে গতকাল বুধবার সরকার ও সরকারের বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন মনোভাবের কথা তুলে ধরেছেন।

ডেরেক শোলে দুই দিনের সফরে গত মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টাও। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদারের ধারাবাহিকতায় ঢাকা সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা। গত মাসে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের এক মাসের মাথায় বাংলাদেশে এলেন ডেরেক শোলে।

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সফরে ডেরেক শোলে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকার সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন ডেরেক শোলে। এরপর তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

ডেরেক শোলে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খুব ভালো বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দেয়, সে কারণেই আমরা আজ এখানে এসেছি। রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ওপর আমরা কতটা গুরুত্ব দিই, আমার সফর তারই প্রতিফলন।’

ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আশাবাদী। এটা ৫১ বছরের শক্তিশালী অংশীদারত্ব এবং আগামী ৫১ বছর এবং তার পরবর্তী সময়ের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। অভিন্ন অনেক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি আমাদের একই রকমের অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে। সেগুলো নিয়েই আমরা আজ আলোচনা করেছি।’

এ সময় ডেরেক শোলের সফরের গুরুত্ব তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি এসেছেন আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ভালো করার জন্য, শক্তিশালী করার জন্য। গত ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু এই সম্পর্ককে আমরা আরও সামনে নিয়ে যেতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। তারা আমাদের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।’

ডেরেক শোলে রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে প্রাতরাশ সভার মধ্য দিয়ে গতকাল দিনের কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে দুপুরে আসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

ঢাকার কূটনীতিকেরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার সুরক্ষা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো প্রসঙ্গগুলো এসেছে। তবে সময়ের ব্যাপ্তি কম থাকায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রসঙ্গটি তোলেন ডেরেক শোলে। আলাদা আলোচনায় তাঁরা দুজনেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের সাংবিধানিক বাধ্যকতার বিষয়টি মার্কিন কর্মকর্তাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।

সকালে প্রাতরাশ সভায় উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রসঙ্গটি তুললে পররাষ্ট্রসচিব মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্সেলরকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের দায়িত্ব এবং সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এ সময় মাসুদ বিন মোমেন উল্লেখ করেন, প্রথমবারের মতো সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন আইন পাস হয়েছে এবং ওই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ইসি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন এবং এর প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করেই সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর।

বিকেলে রাজধানীর আমেরিকান সেন্টারে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডেরেক শোলে। সেখানেও নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এসেছে।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে কী হবে, জানতে চাইলে ডেরেক শোলে বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের পূর্বানুমান করতে চাই না। বাংলাদেশে নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, সে ব্যাপারে আমি আশাবাদী। সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের কথার ওপর আস্থা রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’

ডেরেক শোলে আরও বলেন, ‘নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষ করে মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ, আগের নির্বাচন নিয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো গোপন রাখিনি। সামনের দিনগুলোতেও এ বিষয়গুলোতে উদ্বেগ থাকলে তা তুলে ধরব।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডেরেক শোলে বলেন, ‘বিশ্বের শক্তিশালী গণতন্ত্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। বিশ্বের যেকোনো দেশে গণতন্ত্র সংকুচিত হয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা সীমিত করে নেয়। এর মানে এই নয় যে আমরা সহযোগিতা করব না। এর মানে এটাও নয় যে আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয়। সম্পর্ক সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনায় আসে ব্যবসা–বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।’

আমেরিকান সেন্টারে অনুষ্ঠিত ডেরেক শোলের সঙ্গে মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম, দৈনিক ইত্তেফাক–এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সমকাল–এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড–এর সম্পাদক ইনাম আহমেদ, এএফপির ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম, চ্যানেল ২৪–এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন এবং যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গ

ডেরেক শোলে ঢাকা সফরে মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়েও জোর দিয়েছেন। গতকাল পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে প্রাতরাশ সভায় উপস্থিত কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ডেরেক শোলে ভিন্নমতাবলম্বীদের মানবাধিকার সুরক্ষার প্রসঙ্গটি তুললে সরকারের অবস্থান তাঁকে জানানো হয়। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন সরকারের সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত বাংলাদেশের তিনজন পেশাজীবীর প্রসঙ্গ ডেরেক শোলে তুলেছেন। তখন তাঁকে বলা হয়েছে, সরকার এ বিষয়ে অবগত রয়েছে। তাঁদের প্রতি যাতে বিরূপ আচরণ না হয়, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার

ডেরেক শোলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার পাশাপাশি এ সংকটের শিকড় সন্ধানে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার কথা বলেছেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ামনারের ১০ লাখের বেশি শরণার্থীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। এই শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশকে সহায়তার পাশাপাশি আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি এ সংকটের গোড়ার কারণ নিয়ে কাজ করতে, যা মিয়ানমারের ভেতরেই নিহিত।’

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সাহায্য করছে এবং করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে তারা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে। তারাও আমাদের সঙ্গে একমত, রোহিঙ্গাদের জীবনমান আরও উন্নত করতে হবে, তাদের হৃদয়ে একটা আশা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গেই আছে।’




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!