ধানের পাতা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাষীরা। কালিয়ার চাচুড়ি ও বড়দিয়া হাটে এসব চারা বিক্রি করেন তারা। নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলাসহ পাশের জেলা গোপালগঞ্জ, খুলনা ও বাগেরহাটের কৃষক-ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে চারা কিনে নিজেদের এলাকায় নিচ্ছে। আর এ হাটকে ঘিরে এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার কৃষক, ব্যবসায়ী, পরিবহন চালকসহ হাট সংশ্লিষ্টদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এ বছর দেড় কোটি টাকার চারা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি গ্রামের সড়কের পাশে খেলার মাঠে বসে বোরো ধানের চারার হাট। প্রতি সপ্তাহের রোববার ও বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চারা বেচাকেনা হয়। নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলাসহ পাশের জেলা গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখানে চারা কিনতে আসেন।
কথা হয় চারা বিক্রেতা লিয়াকত হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এক পণ চারা তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবছর ৪০ শতক জমিতে চারা রোপন করেছেন। ভালো দাম পাচ্ছেন।
আরেক কৃষক আজমির বলেন, প্রতি বছর পৌষের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় দুই মাস এখানে চারা বেচাকেনা হয়। এ হাটে অন্তত ১০ ধরনের ধানের চারা বেচাকেনা হয়। বেশিরভাগ বেচাকেনা হয় হাইব্রিড ধানের চারা।
লোহাগড়ার আড়পাড়া গ্রামের কৃষক তজিবার শেখ বলেন, প্রতি বছর তিনি এ হাটে চারা কিনতে আসেন। গত বছর থেকে প্রতি পণ চারা অন্তত ২০-৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কালিয়ার আমতলা এলাকার তুহিন কাগজী বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে নিজের জমিতে চারা উপাদন করে এ হাটে বিক্রি করছি। এ বছর ৩০ শতক জমিতে চারা উৎপাদন করেছি। নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাকী চারা বিক্রি করছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেশি দাম পাচ্ছি।
চারা ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন,
প্রতি বছর তিনি স্থানীয় কৃষকদের জমি থেকে চারা কিনে এ হাটে বিক্রি করেন। চলতি মৌসুমে চারার চাহিদা একটু বেশি। সেজন্য দামও কিছুটা বেশি।
কালিয়া উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, প্রতি হাটে এখানে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার চারা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। বিক্রি চলে আড়াই থেকে তিন মাস। সে হিসেবে এখান থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার চারা কেনাবেচা হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, এখানে চারা বিক্রেতাদের থেকে ইজারা কর্তৃপক্ষ কোনো খাজনা নেন না। যারা চারা কিনে নিয়ে যান তাদের কাছ থেকে প্রতি ভ্যানে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত খাজনা নেয়।
কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবির কুমার বিশ্বাস বলেন, কৃষকদের বীজ, সার ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। এ বছর উপজেলায় ৮৭৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, কালিয়ার চাচুড়ি ও বড়দিয়া হাটসহ জেলার আরো কয়েকটি হাটে বোরো মৌসুমে চারা বেচাকেনা হয়। জেলার মধ্যে চাচুড়ি চারার হাট সবচেয়ে বড়। এ বছর চারার ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। দিন দিন এ এলাকার কৃষকরা চারা উৎপাদন করে বিক্রির পরিধি বাড়াচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তাদের সহায়তা করছে।