খুলনায় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। গত দুই সপ্তাহ ধরে মশার যন্ত্রণায় একরকম অতিষ্ঠ খুলনার মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে এই যন্ত্রণা। কিন্তু মশক নিধনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না খুলনা সিটি করপোরেশনকে (কেসিসি)। মৌসুম পরিবর্তনের সময় মশার উপদ্রব বাড়ার আগাম তথ্য থাকলেও প্রস্তুতি না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ খুলনার নাগরিক নেতারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত মশার প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। কিউলেক্স নামের এক শ্রেণীর মশারা এ সময় দ্রুত বংশবিস্তার করে। সঠিক সময়ে মশার প্রজনন রোধ করতে না পারায় নগরীতে মশা প্রকোপ বেড়েছে। দিনদিন সেটা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেসিসির মশক নিধন কর্মসূচির ফলাফল খুবই সামান্য। মশার যন্ত্রণায় একরকম অতিষ্ঠ নগরীর মানুষ। ফেব্রুয়ারি শুরু থেকে মশার উৎপাত শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে তাদের অত্যাচার অসহনীয় হয়ে উঠেছে। যতই দিন যাচ্ছে মশার উৎপাত বাড়ছেই, কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
গোবরচাকা এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, মশার যন্ত্রণার কথা বলে শেষ করা যাবে না। বিকালের পর থেকে মশার কয়েল জ্বালাতে হয়। সন্ধ্যার পর ঘরের ভেতর থাকাই দুস্কর হয়ে যায়। তখন কয়েলেও কাজ হয় না। বিষয়টি কেসিসিকেও জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ওই সড়কের আরেক বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, গত ৬ মাসের মধ্যে একদিনও কেসিসির কাউকে মশা মারতে দেখেনি। ফগার মেশিনের আওয়াজও শুনিনি।
কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আজিজ বলেন, সেফটি ট্যাংকের আউট-লেট উন্মুক্ত রাখা, ড্রেনে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঝোপঝাড় ও ফুলের বাগান পরিস্কার না করার কারনে মশার উপদ্রব বেড়েছে। তবে অন্যতম কারণ নগরবাসীর অসচেতনতা। যার কারণে মশা নিধন কার্যক্রম ফলপ্রসু হচ্ছে না।
তিনি বলেন, মশার অত্যাচার বেড়েছে। আমরা মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছি। গত সপ্তাহ থেকে দ্বিগুণ হারে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি খুলনা নাগরিক সমাজের
ক্রমবর্ধমান মশার উপদ্রব থেকে খুলনা মহানগরবাসীকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন খুলনা নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ অ্যাড. আ ফ ম মহসীন এবং সদস্য সচিব অ্যাড. মোঃ বাবুল হাওলাদার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, খুলনা মহানগরীতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে আশংকাজনকভাবে। ফলশ্রুতিতে ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এমতাবস্থায় সম্প্রতি কেসিসি মেয়র মশা নিধনের ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করলেও তার যথোপযুক্ত বাস্তবায়ন নেই। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
নেতৃদ্বয় বিবৃতিতে বলেন, মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমত মশানাশক ঔষধের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে, সংশ্লিষ্টদের কাজে থাকতে হবে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা, বর্জ ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি গতি বাড়াতে হবে, মশার প্রজনন স্থানগুলো চিহ্নিত করে নিয়মিত ঔষধ ছেঁটাতে হবে, ড্রেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং নগরীকে পলিথিন মুক্ত করা মশা নিধনের ক্ষেত্রে একটি জরুরী বিষয় বলেও বিবৃতিদাতারা মনে করেন।
বিবৃতিদাতারা নগরবাসীর প্রতি নিজ নিজ দায়িত্বে যার যার ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতিও বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন।
খুলনা গেজেট/ এইচ