স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেবল তুরস্কেই নিহতের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর প্রতিবেশী সিরিয়ায় প্রাণ গেছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষের। এ নিয়ে সোমবারের ভূমিকম্পে প্রাণহানি ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
ভূমিকম্পে হাজারও মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়ায় এখন তুরস্কের বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসছে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, সোমবার আঘাত হানা ভূমিকম্পে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ৮৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিরিয়ায় ভূমিকম্পে প্রাণহানি ২ হাজার ৫৫৩ জন ছাড়িয়ে গেছে। আর তুরস্কে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ হাজার ৮৪৮ জন। ফলে পাঁচদিন আগের এই ভূমিকম্পে উভয় দেশে মারা গেছেন ২৫ হাজার ৪০১ জন।
এদিকে, তুরস্কে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প আঘাত হানার পঞ্চম দিনেও ধ্বংসস্তূপের নিচে মিলছে প্রাণের স্পন্দন। উদ্ধারকারীদের প্রাণপন চেষ্টায় এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত লোকজনের সন্ধান মিলছে। অলৌকিকভাবে উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তুরস্কে আজ আরও কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়ার পাঁচ দিনের বেশি সময় পর এক কিশোর ও দুই নারীকে জীবিত উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারী কর্মীরা।
তুরস্কের কাহরামানমারাস শহরের বাতাসে এখন লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বলে আল-জাজিরার প্রতিনিধি রেসুল সরদার জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সর্বত্রই লাশের গন্ধ পাচ্ছি। কয়েকজনের মৃতদেহ বের করতে দেখেছি। এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।’
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তুরস্কে ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে ৬৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলো থেকে তুরস্কে মোট ৩১ হাজার জন উদ্ধার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ভূমিকম্পে আহত আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ভূমিকম্পে গৃহহীন হয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
ফুয়াত ওকতে বলেছেন, এক বছরের মধ্যে এসব গৃহহীন মানুষের স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভূমিকম্পের ক্ষত ভুলে যান।
গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া। ওই ভূমিকম্পের ১৫ মিনিট পর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরও একটি বড় ভূমিকম্প এবং পরে শতাধিক আফটারশক হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাশ প্রদেশের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল।
খুলনা গেজেট/কেডি