ছুটিতে বাড়িতে গেলে আমার ছেলে বলে বাবা গোস্ত খাব। ছেলেকে গোশত খাওয়াতে পারলাম না। ৪ দিনের ছুটি শেষ করে কর্মস্থলে চলে আসি, এর থেকে কষ্টের আর দুঃখের কি আছে বলেন? যেখানে আমরা নিজেদের সংসার চালাতে পারছি না। ধার দেনা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনমতে আমাদের চলতে হচ্ছে। মানসিকভাবে আমরা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। ৭ মাস বেতন পাইনা। কবে বেতন পাব তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। চাকুরীরও কোনও নিশ্চয়তা নেই। মানসিক চাপ নিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় কিভাবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং যানবাহন রক্ষা করবো?
খুলনা গেজেটের এভাবেই তাদের কষ্ট এবং হতাশার কথা বর্ণনা করেন খুলনার ফুলবাড়িগেট রেল ক্রসিংয়ের গেটকিপার হিসেবে দায়িত্ব পালনরত মোঃ মেহেদী হাসান। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় জোন পাকশী’র বিভাগীয় প্রকৌশলী-১’র একটি প্রকল্পের আওতায় ওই গেটে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
মেহেদী হাসান আরো বলেন, ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন”রেলওয়ে গেটকিপার একটি স্পর্শকাতর চাকুরী। দ্রুত তাদের চাকুরী স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করে নিন”। কিন্তু দুঃখের বিষয় রেলপথ মন্ত্রনালয় এখনো আমাদের চাকুরী স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এছাড়া গত রমজান মাসে চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবীতে আমরা ১৭ দিন অনশন পালন করি। চাকুরীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা খুবই হতাশ। মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা নিয়ে এত বড় একটা মহান, কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা কিভাবে সম্ভব?
মেহেদীর মতো ফুলবাড়িগেট রেলক্রসিংয়ে গেট কিপার হিসেবে দায়িত্বপালনরত, মোঃ সুমন শেখ, ইউনূস এবং রনজিতেরও একই রকম আক্ষেপ এবং হতাশা। তারা বলেন, রেলক্রসিংয়ের পাশে যে ছোট গার্ডরুম থেকে আমরা ডিউটি করি সেখানে নেই কোন টয়লেট, পানি এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা। রেল ক্রসিংয়ে ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবস্থা তৈরী হয়নি। পুরানো আমলের সিগন্যাল ব্যবস্থা মাধ্যমে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। ট্রেন চলাচলের সময় গেট আটকাতে কোন কারণে সামান্য বিলম্ব হলে অনেকে আমাদের মারধর করতে উদ্যত হয়। আবার কোন কারণে গেট একটু আগে আটকালেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এককথায় কর্মস্থলে আমরা কোনক্রমে নিরাপদ নয়।
জানা যায়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেল ক্রসিং পারাপারে জনসাধারণ সহ যানবাহনের দুর্ঘটনা এড়াতে অস্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক এসকল গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয় । সারাদেশের রেলের ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিং এ দুর্ঘটনা এড়াতে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘন্টা অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় দায়িত্ব পালন করছেন এ সকল গেট কিপার।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের ১ হাজার ৫০৫ জন গেটকিপার ৭ মাস বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে কিন্ত চাকুরী স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। এ পর্যন্ত তিন বার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। প্রকল্পটির আওতায় এ সকল গেট কিপাররা ৫ বছর যাবৎ গেট কিপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৫ বছরে কোনরূপ বেতন ভাতাও বৃদ্ধি করা হয়নি। তাদের মাসিক বেতন ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোন, পাকশী’র বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ ‘র গেট কিপার নিয়োগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বীরমল মন্ডলের সাথে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রকল্পের ফান্ডে অর্থ না থাকার কারণে আমরা গেটকিপারদের বেতন দিতে পারছিনা। গেটকিপারদের চাকুরী স্থায়ীকরণের কোনো নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারব না। তবে তাদের চাকুরী স্থায়ীকরণের জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।