চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম।
বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় এ ফল প্রকাশ করা হয়।
ফলাফলে দেখা গেছে, এবার মোট ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন, যা গতবারের চেয়ে ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৯৪ জন কম। গত বছর পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ থাকলেও এ বছর তা ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
২০২২ সালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এবার ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর জানান, এইচএসসিতে এবার যশোর শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার কমেছে। ২০২২ সালের পরীক্ষায় পাসের হার ৮৩.৯৫। একইসাথে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যাও। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ৭০৩ জন। বুধবার প্রকাশিত ফলাফলের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৯৮.১১। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২০ হাজার ৮৭৮ জন পরীক্ষার্থী।
২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধিনে অংশগ্রহণ করে ৯৮ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে পাস করেছে ৮২ হাজার ৫০১ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৭ হাজার ৭৪৭ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ১৬ হাজার ৬৪৭, মানবিক বিভাগ থেকে ৬৭ হাজার ৬৭২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৫৪ হাজার ৫৫৯ ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ১২ হাজার ৮৫০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ১১ হাজার ২৯৫ জন। জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ছেলে ৪ হাজার ৮০৫ ও মেয়ে ৪ হাজার ১৫৭, মানবিক বিভাগে ছেলে ২ হাজার ৩০৬ ও মেয়ে ৫ হাজার ৪৪৬ এবং বাণিজ্য বিভাগে ছেলে ৯০৩ ও মেয়ে ১ হাজার ৮৬ জন রয়েছে।
এদিন দুপুর ১২টার পরে যশোর শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সমীর কুমার কুন্ডু আনুষ্ঠানিকভাবে এইচএসসির ফলাফল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধিনে দশটি জেলার ৫৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার্থীরা এইচএসসিতে অংশ গ্রহণ করে। এবার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ২২৮টি। এসব কেন্দ্রে থেকে ৯৮ হাজার ২৬৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮২ হাজার ৫০১ জন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরে মাত্র তিনটি বিষয়ে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাকি বিষয়গুলো অ্যানালাইসিস করে ফলাফল দেয়া হয়। এবার সে পরিস্থিতি ছিল না। শুধুমাত্র আইসিটি বিষয় বাদে সব সাবেক্টে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে এবারের পরীক্ষায় কারো ফলাফল ইউথেল নেই। সবারই ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের সিস্টেম এনালিস্টদের দক্ষতায় এবার কারো ফলাফল ইউথেল হয়নি বলে তিনি জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট জাহাঙ্গীর কবির, উপ কলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাস, উপ বিদ্যালয় পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চ মাধ্যমিক) সায়মা সিরাজ।
অপরদিকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, বরিশালে ৮৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৯ দশমিক ০৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, সিলেটে ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশ, ময়মনসিংহ ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ ও যশোরে ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪২১ জন, রাজশাহীতে ২১ হাজার ৮৫৫ জন, কুমিল্লায় ১৪ হাজার ৯৯১ জন, যশোরে ১৮ হাজার ৭০৩ জন, চট্টগ্রামে ১২ হাজার ৬৭০ জন, বরিশালে ৭ হাজার ৩৮৬ জন, সিলেটে ৪ হাজার ৮৭১ জন, দিনাজপুরে ১১ হাজার ৮৩০ জন ও ময়মনসিংহে ৫ হাজার ২৮ জন। আর মাদ্রাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৪২৩ জন ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে পেয়েছেন ৭ হাজার ১০৪ জন।
২০২২ সালের ৬ নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মোট ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৯ হাজার ৫২২ জন ও ছাত্রী ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮৬৫ জন। গত ১৩ ডিসেম্বর তত্ত্বীয় পরীক্ষা ও ২২ ডিসেম্বর ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়।
ফল জানা যাবে যেভাবে
প্রার্থীরা অনলাইনে বা মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে তাদের ফলাফল জানতে পারবেন।
মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে HSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম ৩ অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
উদাহরণ—HSC DHA 123456 2022 লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে ফলাফল।
এ ছাড়া, http://www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইট থেকেও ফলাফল জানা যাবে। রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরে প্রবেশ করে পৃথক ফলাফল শিট ডাউনলোডও করা যাবে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল ডাউনলোড করে প্রকাশ করার জন্য https://dhakaeducationboard.gov.bd/ ওয়েবসাইটের Result কর্নারে ক্লিক করে প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএনের মাধ্যমে ফলাফল ডাউনলোড করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ বিএমএস