খুলনা, বাংলাদেশ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাকা খুলে গেছে, ৭১ জন যাত্রী নিয়ে শাহজালালে জরুরি অবতরণ
  সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের
  টানা তৃতীয় দিন চলছে কাকরাইলে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, জুমার পর গণঅনশন
  নাকবা দিবসে ইসরায়েলের হামলায় ১১৫ ফিলিস্তিনি নিহত
খুলনা বিভাগে ১৪.১৩ শতাংশ

সারাদেশে আত্মহত্যা ৫৩২ শিক্ষার্থীর, শীর্ষে ঢাকা

গেজেট ডেস্ক

এক বছরে (২০২২) সারাদেশে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সারাদেশের মধ্যে শীর্ষ রয়েছে ঢাকা। এখানে আত্মহত্যার ২৩.৭৭ শতাংশ। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। খুলনা বিভাগে ১৪.১৩ শতাংশ।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ভার্চুয়ালভাবে সাংবাদিকদের সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস ইউনিট, আঁচল ফাউন্ডেশন টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী।

মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বদ্ধিৃর মাধ্যমে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া তারুণ্যভিত্তিক আঁচল ফাউন্ডেশন সংগঠনটি ২০২২ সালে আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা খুঁজতে গিয়ে দেখতে পায় সারাদেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ, এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আত্মহত্যা করেছে ৮৬ জন শিক্ষার্থী।

আঁচল ফাউন্ডেশনের তরুণ গবেষকরা দেশের দেড়শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের তথ্যসমূহ সংগ্রহ করে।

ভার্চুয়াল সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।

আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে শিক্ষার্থীরা দেশের পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী ২০২২ সালে সর্বমোট স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪৬ জন। এর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ে ১০৬ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে শুধু মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ২৮৫ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬১ জন।

এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আত্মহত্যার মাস ভিত্তিক পর্যালোচনা সমন্বয়কৃত তথ্যের মাসভিত্তিক পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, স্কুল এবং কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৪১ জন, এপ্রিলে ৫০ জন, মে মাসে ৪৫ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪০ জন, আগস্টে ২১ জন, সেপ্টেম্বরে ৩২ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ৪৯ জন এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে ৩৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। দেখা যায়, এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন যা ছিলো ৫০ জন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল এবং কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহননের দিকে এগিয়ে গেছেন। আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা সারাদেশের মোট আটটি বিভাগে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে যা ২৩.৭৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ যা ১৭.২৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগ যা ১৬.৮১ শতাংশ। এছাড়াও খুলনা বিভাগে ১৪.১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮.৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮.৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬.২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪.৪৮ শতাংশ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।

আঁচলের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত ২৩.৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহ ৩.১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্থতা ২.০১ শতাংশ, মানসিক সমস্যা ১.৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যা ১.৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছেন ৩.১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং নিয়োগের ব্যাপারে জোর দিতে বলেন। আত্মহত্যা প্রবণতা কমিয়ে আনতে সন্তানদের উপর অভিভাবকদের অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে আনতে হবে জানান তিনি। সরকারের উচিত সমন্বিত পলিসি তৈরি করা তাহলে আত্মহত্যা কমে আসবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার চিত্র নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন “ শিশু কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয়গুলোও তাদেরকে আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সাথে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদেরকে আত্মহত্যার মত বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।” এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে তানসেন জানান “আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের শিক্ষক এবং বাবা মায়েদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুকালে বাচ্চাদের উপর বাবা মায়ের প্রভাব যেমন বেশি থাকে, কৈশোরে সেই দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষকদের উপর। তাই শিক্ষার্থীদের মানসিক গঠনে তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যও বেশি। আমাদের দেশে সন্তান লালন পালনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে শেখার সুযোগ নেই বললেই চলে। আবার সন্তান লালন পালনও যে শিক্ষণীয় একটি বিষয় তাও মানতে নারাজ অনেক বাবা মা-ই। ফলে সন্তানদের মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে বাবা মায়েরা অনেক ক্ষেত্রেই থাকেন উদাসীন। তাই সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা।

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবেলায় আঁচল ফাউন্ডেশন বেশকিছু প্রস্তবনা দিয়েছে- হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বদ্ধিৃ করা; সন্তানদের মানসিক বিকাশ এবং তাদেরকে সহানুভূতির সাথে শুনতে ও বঝুতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালুকরা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ণে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; স্কুল, কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন করা; প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বদ্ধিৃতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা; স্কুল-কলেজের ছাত্রকল্যাণ ফান্ডের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে তা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যা সমাধান অনেকাংশে সম্ভব। এতে আর্থিক সংকটজনিত আত্মহত্যার হার কমে আসবে; প্রেম-প্রণয় ঘটিত সম্পর্কে বা অজ্ঞাতসারে ধারণ করা গোপন ছবি, ভিডিও ইত্যাদি প্রচার তথা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ ও সাইবার ক্রাইমের বিষয়ে শাস্তি উল্লেখপূর্বক বিশেষ প্রচারণাভিযান পরিচালনা করা; স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা সতর্কতা চিহ্ন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। এর মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য আত্মহত্যাকারীকে বাঁচানো যাবে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেন্টাল হেলথ কর্নার খোলা। শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তির আওতায় এনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ট্রেনিং দেওয়া; কার্যকর মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ক্লিনিক্যাল সুবিধার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা ও শিক্ষার্থীদের আবেগীয় অনভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্য্যশীলতার পাঠ শেখানো।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!