সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী এসআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাসারের আত্মহননের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম সহ সাতজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রয়াত শিক্ষকের স্ত্রী নুরুন্নাহার পারভীন বাদী হয়ে বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাতে শ্যামনগর থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
কৈখালী এসআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম ও বাদীর স্বামীর আবুল বাসারের সাথে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আব্দুল মান্নান ও আব্দুল মজিদসহ তিনজন সহকারী শিক্ষক এবং পরিচালনা পরিষদের তিন সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
পারস্পারিক যোগসাজশে নানামুখী চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তার স্বামীকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এদিকে, সাতক্ষীরা মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ওই প্রধান শিক্ষকের মরদেহ বৃহস্পতিবার বিকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের পক্ষ হতে শোকজ নোটিশ পাওয়র পর গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল বাসার। গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের কারনে গত কয়েক দিন ধরে তার তিনি ছুটিতে ছিলেন। আকস্মিকভাবে মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের বর্তমান কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশ হাতে পান তিনি। সেখানে আগের কমিটির মেয়াদকালে নিয়োগ দেয়া ব্যক্তিদের নিকট থেকে আদায়কৃত প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার হিসাব চাওয়া হয় তার কাছে। নোটিশে অর্থ তসরুফের অভিযোগ এনে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীর নিকট হতে আদায় হওয়া প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা ফেরত না দিলে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়। যথাসময়ের মধ্যে হিসাব দিতে ব্যর্থ হলে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের শোকজন নোটিশ প্রাপ্তির পর থেকে প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এক পর্যায়ে বুধবার দুপুরে দুই ছেলে নানার বাড়ি থাকায় ও স্ত্রী অসুস্থ স্বামীর ঔষধ কিনতে বাসার বাইরে যাওয়ার সুযোগে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানান, মৃতের ভাই মোঃ আবুল খায়ের।
এদিকে, প্রধান শিক্ষক আবুল বাসারের আত্মহত্যার ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। নিজেদের মেয়াদকালে পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষ ব্যক্তিদের মর্জিমাফিক জনবল নিয়োগ প্রদানসহ অর্থ গ্রহণের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের উপর প্রতিপক্ষের মানসিক চাপ সৃষ্টির ঘটনায় রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে পরিচালনা পরিষদের অর্থ আত্মসাতের পর প্রধান শিক্ষককে ‘বলির পাঠা’ বানানোর ঘটনার বিশদ তদন্তের দাবি করেছে উপজেলায় কর্মরত শিক্ষকরা। তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োাগ প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধেরও আহবান জানিয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী জানান, পরিচালনা পরিষদের চাপের কারণে প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। সদ্য গঠিত কমিটি তার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করায় তিনি কয়েকদিন আগে থেকে সহকর্মীদের কাছে নিজের অসহায়ত্বের বিষয়টি জানিয়ে আসছিলেন। আবুল বাসারের আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনার সাথে জড়িতদের পাশাপাশি উক্ত বিদ্যালয়ের নিয়োাগ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে তদন্তের দাবি জানান তিনি।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম বাদল জানান, ময়না তদন্ত শেষে শিক্ষকের মরদেহ বৃহস্পতিবার বিকালে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এঘটনায় মৃতের স্ত্রী বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।