আর কেউ মিষ্টি হাসি দিয়ে বলবেন না দিদার ভাই কেমন আছেন। কেমন যাচ্ছে আপনার দিনকাল। দুপুর সাড়ে বারোটা বা একটার দিকে প্রেসক্লাবে এসে রুহুল আমিন বা চাঁনমিয়াকে ডেকে আর বলবে না পানি আর চা দেও।
আমি বলছি অরুণ সাহার কথা। দৈনিক পূর্বাঞ্চলের বার্তা সম্পাদক ছিলেন অরুণ। মৃত্যুর আগ অবধি কাজ করেছেন ঐ পদেই। দুই যুগের বেশি সময় পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
সম্পাদক মরহুম লিয়াকত আলী, বর্তমান সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সনি বা প্রকাশক বেগম ফেরদৌসী আলীকে ঘিরে দৈনিক পূর্বাঞ্চল আবর্তিত হলেও সংবাদের মূল দায়িত্ব ছিল অরুণ সাহার কাঁধে। যেমনি প্রশাসনিক ও হিসাব বিভাগের দায়িত্ব ছিল মরহুম জাকির হোসেনের উপর।
অরুণ সাহার সাথে আমার পরিচয় খেলার মাঠে। অরুণ ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে সংবাদ জগতে প্রবেশ করে। আমার সংবাদ জগতে আসার কয়েক বছর পর তার এখানে পদার্পণ। নির্ভেজাল এই মানুষ খুলনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। কিন্তু কখনো কোন প্রকার দলগত বা গোষ্ঠীগত প্রভাব তার মধ্যে দেখা যায়নি। সদালাপী ও অমায়িক এই মানুষটি ঝগড়া বিবাদ তো দুরের কথা, কারোর সাথে জোরে কথা বলতে শুনিনি। কোন কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি তার চরিত্রে ছিল না।
দৈনিক পূর্বাঞ্চল আজকের অবস্থায় আনার পিছনে তার মূল্যবান অবদানে চিরদিন পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রতিদিন রাত একটা/দুইটা অবধি জেগে থেকে পত্রিকার কাজ শেষ করে তবে বাড়ি ফিরতেন। আমি যেটা কল্পনাও করতে পারি না। আর এই কারণে আমার খুলনার কোন দৈনিকে কাজ করা হয়নি। যদিও আমার হাতেখড়ি দৈনিক জনবার্তায়। তাও অতি সংক্ষিপ্ত সময়ে।
অরুণকে হারিয়ে আমার জানা মতে খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সমূহের বার্তা সম্পাদকদের একটি অধ্যয় শেষ হয়ে গেল। একে একে আমরা হারিয়েছি দৈনিক জন্মভূমির বার্তা সম্পাদক রফিকুজজামান, দৈনিক প্রবাহের আবদুল্লাহ আল মামুন, দৈনিক জনবার্তা পরবর্তীতে দৈনিক জন্মভূমির আনোয়ার আহমেদ এবং ডেইলি ট্রিবিউনের কাজী আমানুল্লাহকে।
একটা কথা না বললে নয়, তখন প্রেসক্লাব ছিল সার্কিট হাউসের হ্যালিপ্যাডে। অরুণের তখন সাংবাদিকতায় ৬/৭ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু প্রেসক্লাবের সদস্য পদ লাভ করেনি। একদিন সে বললো আমরা কয়েকজন প্রেসক্লাবের সদস্য পদের জন্য অবস্থান ধর্মঘট করবো। আপনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমি বললাম আমি তো ক্লাবের সদস্য, আমাকে কেন। উত্তরে সে বলেছিল আপনি সব সময় নায্য দাবির সঙ্গে থাকেন, তাই আপনাকে বলছি।
আর একটা কথা না বললে নয়। সবে মাত্র মোবাইল ফোন দেশে চালু হয়েছে। খুলনার সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনের সিমের জন্য আবেদন করতে হবে। আমি সেই সময় খুলনার বাইরে ছিলাম। অরুণ সাহা সে সময় আমার মোবাইল সিমের আবেদন করে দিয়েছিলেন। যে সিমটি এখনো আমি ব্যবহার করি।
সবশেষে বলি, অরুণকে হারিয়ে আমি শুধু ছোট ভাই সহকর্মীকে হারায় নি। খুলনা হারিয়েছে একজন নির্ভিক সাংবাদিককে।
আপনজন হারিয়ে আজ আমরা ব্যাথিত ও শোকাহত। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক : যুগ্ম সম্পাদক, খুলনা গেজেট ও বিভাগীয় প্রতিনিধি, ইউএনবি।
খুলনা গেজেট/কেডি