বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান দেশের খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, মানুষের সেবা করার মহান ব্রত নিয়ে যারা কাজ করে তারা মহামানব। মানুষ থেকে মানব হতে হয়। মানুষকে দিতে না পারলে মহামানব হওয়া যায়না। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা তাঁর জীবনের সবকিছু মানুষকে দিয়ে গেছেন, তাই তিনি আজ মহামানব হয়েছেন। তার উদ্দেশ্য আর আদর্শ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে একটি আদর্শ সমাজ গড়া সম্ভব হবে।
হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা’র ১৪৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা রওজা শরীফ প্রাঙ্গনে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইসলামের পরশমানিক পেয়েছিলেন। খান বাহাদুর আহছানউল্লা সৃষ্টার ইবাদত, সৃষ্টির সেবা এই মহান ব্রত নিয়ে কাজ করে গেছেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে লেখাপড়া করতেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে কেবল মানুষ তৈরী করেন না সেখানে প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয়। খানবাহাদুর আহছানউল্লাকে নারী শিক্ষা জাগরনের অগ্রদুত হিসেবে উল্লেখ করে ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন আরও বলেন ১৯১৬ সালে ফয়জুন্নেছা নামের তৎকালিন এক ছাত্রীকে স্কলারশীপ দিয়ে লন্ডনে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি রাজনীতি পছন্দ করতেন না উল্লেখ করে বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় আছে তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়, আর যারা ক্ষমতায় নেই তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। আজ খানবাহাদুর আহছানউল্লা’র মত মানুষের প্রয়োজন ছিল। যারা কেবল মানুষকে আলোকবর্তিকার পথে নিয়ে যেতে পারতেন।
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলহাজ্জ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি’র সভাপতিত্বে ও খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইন্সটিটিউট এর পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে ‘জন্মসার্ধশতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ’ শিরোনামের মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন, বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক গাজী আজিজুর রহমান। সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইন্সটিটিউট এর মহাপরিচালক এ এফ এম এনামুল হক, নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাবেক সভাপতি জেসন ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড এর চেয়ারম্যান আলহাজ্জ মোহাম্মদ সেলিমউল্লা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শওকাত আরা হোসেন, নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, সহ-সভাপতি আলহাজ্জ সাইদুর রহমান, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রহিমা সুলতানা বুশরা প্রমূখ।
সেমিনারে পাক রওজা শরীফের খাদেম মৌঃ আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সম্পাদক ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক আলহাজ্জ চৌধুরী আমজাদ হোসেন ও মোঃ মালেকুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ারুল হক, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, আবুল ফজল, ইকবাল মাসুদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার সহস্রাধিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক, সাহিত্যিক, দার্শনিক, আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম নেপথ্যের কারিগর, হযরত শাহ্ছুফী আলহাজ্জ খানবাহাদুর আহ্ছানউলল্লা (র.) এঁর জন্মসার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে বছরজুড়ে সেবামূলক নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন।
খুলনা গেজেট/ টি আই