মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা একটি জাহাজকে গ্রহণে ঢাকাকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে মস্কো। ১০ দিন ধরে স্পার্টা-৩ নামের রাশিয়ান জাহাজটি গভীর সমুদ্রে (আন্তর্জাতিক জলসীমায়) অপেক্ষমাণ। এটি মোংলা পোর্টে নোঙ্গর করতে চায়। জাহাজটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মালামাল নিয়ে এসেছে। সেগুনবাগিচা জানিয়েছে, নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রাশিয়ার ওই জাহাজকে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। এ অবস্থায় জাহাজটিকে গ্রহণ না করলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্টের হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। অবশ্য হুমকি সংক্রান্ত রাশিয়ার পত্র (নোট ভারবাল) পাওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয় এবং কোন অবস্থাতেই যে বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা (যদিও নাম ও কালার বদল করা হয়েছে) জাহাজটিকে গ্রহণ করছে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ান দূতাবাসের পাল্টাপাল্টির (টুইট-পাল্টা টুইট) মধ্যেই মোংলা পোর্ট অভিমুখে রাশিয়ান এমন জাহাজ আসার খবর দেয় ওয়াশিংটন। গত ২০ শে ডিসেম্বর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এ সংক্রান্ত বার্তায় নড়েচড়ে বসে সরকার। শীর্ষ মহলে খবরটি পাঠানো হলে চটজলদি জাহাজটি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়।
বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি মস্কো। তারা তৎক্ষণাৎ তা গ্রহণে চাপ তৈরি করে। সঙ্গে বিরক্তিও প্রকাশ করে। কিন্তু তাতে ঢাকার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন না আসায় সম্পর্ক নষ্টের হুমকি দিয়ে নোট পাঠায় মস্কো।
গত ২২ শে ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মন্টিটস্কি। তখন বিভ্রান্তি ছিল মন্ত্রণালয়ের তাকে তলব করা হয়েছে নাকি স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি গেছেন? সেদিন বিকাল ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলমের সঙ্গে বৈঠক হয় মন্টিটস্কির। আনক্লজ বিল্ডিংস্থ মেরিটাইম সচিবের দপ্তরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রাশিয়া দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল অ্যান্ড ইস্ট ইউরোপ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এস বদিরুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠক নিয়ে সেদিন মুখ খুলতে রাজি না হলেও সচিব এটা স্বীকার করেছিলেন যে, রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য। ইস্যুগুলো স্পর্শকাতর বিবেচনায় এ নিয়ে দু’পক্ষই মুখ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেদিন দায়িত্বশীল একটি সূত্র দাবি করেছিল, সচিব-রাষ্ট্রদূত বৈঠকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়েই মুলত আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোরতায় অনেক দেশে পণ্য পরিবহনে বিঘ্ন ঘটছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে গভীর সমুদ্র থেকে রাশিয়ান জাহাজ ফেরত যাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এরকম জাহাজের একটি ইস্যু রয়েছে দাবি করলেও সেই সূত্র তাৎক্ষণিক তা খোলাসা করেনি। ২৩ শে ডিসেম্বর মানবজমিনে প্রচারিত রুশ রাষ্ট্রদূতের তলব নিয়ে অস্পষ্টতা বিষয়ক রিপোর্ট প্রসঙ্গে আলাপে বুধবার রাতে সেগুনবাগিচার ওই সূত্র ঘটনার বিস্তারিত শেয়ার করতে সম্মত হয়। বলা হয় বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের ৫০ বছরের ইতিহাসে ২২ শে ডিসেম্বর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহীনবাগে যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন সেটাকে তার ‘কর্মের ফল’ আখ্যা দিয়ে ২২ শে ডিসেম্বরই মস্কোতে ব্রিফিং করেছেন মুখপাত্র। ওই দিনে ঢাকাকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ান জাহাজকে ঢুকতে দিতে হুমকি দিয়ে নোট পাঠায় মস্কো। অবশ্য কালবিলম্ব না করে (ওই দিনই) রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া বার্তা দেয় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের কাছে ঢাকা জানতে চায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা আইএমও ৯৫৩৮৮৯২ সনদধারী
স্পার্টা-৩ জাহাজটির নাম ও কালার বদল করার বিষয়টি কেন বাংলাদেশের কাছে গোপন করলো রাশিয়া। জাহাজটি গ্রহণ করলে সমুহ বিপদের যে ঝুঁকি রয়েছে সেটা জানা সত্ত্বেও কেন মস্কো তা বাংলাদেশ অভিমুখে প্রেরণ করলো? এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মস্কো কোন ব্যাখ্যা দেয়নি। স্মরণ করা যায়, গত সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে বিবৃতি, টুইট ও পাল্টা টুইট করে বাংলাদেশ প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকা অবশ্য তাদের উভয়কে এসব কর্মে নিরোৎসাহিত করছে। পূর্ব বা পশ্চিম কোনো দেশের হস্তক্ষেপ নয়, নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে চাইছে বাংলাদেশ।
সূত্র : মানবজমিন