খানজাহান আলী থানার মিরেরডাঙ্গা ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত খুলনা বিভাগীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জরাজীর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীরা যেমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে ঠিক তেমনি চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা প্রদান করছে। ৭ টি আবাসিক ভবন দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ প্রকট আকারে জনবল সংকট বিরাজ করছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৫ সালে ৭ একর জায়গার উপর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি নির্মিত হয়। নামমাত্র কয়েকদফা সংস্কার করা হলেও বড় ধরণের কার্যকরী কোনো সংস্কার করা হয়নি। ৫৭ বছর বয়সী হাসপাতালের ভবনটি বর্তমানে জরাজীর্ণ এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রুপ নিয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরাজীর্ণ দ্বিতল ভবনের সবগুলো ওয়ার্ড এবং রুমের ছাদের প্লাস্টার খসে পড়তে শুরু করেছে। ভবনের ছাদ স্যাঁতসেঁতে হয়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) থেকে ভবনটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এনে ভবন পুনঃনির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে এ প্রতিবেদককে জানান হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস। এছাড়া হাসপাতালের ৭ টি আবাসিক ভবন দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলশ্রুতিতে হাসপাতালের নার্স এবং স্টাফদের আবাসন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫ জন চিকিৎসক থাকলেও নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ২ টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। আবাসিক চিকিৎসক এর ২ টি পদ, হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ার, প্যাথলজিষ্ট, রেডিওলজিস্ট, ওয়ার্ল্ড মাস্টার এবং ড্রাইভারের পদটিগুলি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগকৃত চালক দিয়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো হচ্ছে।
হাসপাতালটিতে কোন সিকিউরিটি গার্ড না থাকায় সর্বদা অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত, বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে হাসপাতালে বাউন্ডারির ভিতর বহিরাগতদের আড্ডা জমে।
বক্ষব্যাধি হাসপাতাল হলেও শুরু থেকে মূলতঃ এখানে শুধুমাত্র যক্ষ্মা বা টিবি রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। হাসপাতালটিতে ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হয়। বরিশালে এ জাতীয় চিকিৎসা না থাকায় উক্ত বিভাগের এ রোগে আক্রান্ত রোগীরাও হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৩৫ জন যক্ষা বা টিবি রোগী ভর্তি রয়েছে, যাদেরকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে নেগেটিভ করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যাতে রোগটি আর বিস্তার লাভ না করতে পারে জানালেন হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডঃ জীবিতেষ বিশ্বাস।
জরাজীর্ণ এ হাসপাতালটি পুনঃনির্মাণ করে আধুনিকায়ন করার পাশাপাশি হাসপাতালটি বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে রূপান্তরিত করে বিভিন্ন ধরণের বক্ষব্যাধির চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টির দাবি খুলনাবাসীর ।
খুলনা গেজেট/ টি আই