ভুল না করে থাকলে গত তিন-চারদিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। রোববার ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বীরত্বপূর্ণ ইনিংসে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেওয়ার পর এবার দ্বিতীয় ম্যাচেও নায়ক মিরাজ। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে ২৭১ রানের বিশাল সংগ্রহ এনে দিয়েছে এই অলরাউন্ডারের ম্যাজিক। তাতে ভারতের নামকরা সব বোলারকে চমকে দিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক এলো মিরাজের ব্যাটে।
মিরপুরের মাঠে প্রায় প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশের ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠছেন মিরাজ। আগের ম্যাচে ওই বিশেষ ইনিংসের তিন দিনের মাথায় এমন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি যেন চোখে লেগে থাকার মতো। অথচ তিনি যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তখন দলের অবস্থা বেশ ভয়াবহ। ৭০ রানের আগেই সাজঘরে ছয় ব্যাটার। এমন বিপর্যয় যে এতোটা দারুণভাবে সামলানো সম্ভব সেটা মিরাজকে আজ না দেখলে জানতোই না বিশ্ব ক্রিকেট।
মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ২৭২ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ রান করে চ্যালেঞ্জিং এই স্কোর গড়ার মূল কারিগর আজ মিরাজ। চাপের মুখে ব্যাটিংয়ে নেমে খেলেছেন ৮৩ বলে ১০০ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। ভারতীয় বোলারদের চমকে দেওয়া চোখ ধাঁধানো সেই ইনিংসে ৮টি চার ও ৪টি ছয়ের মার খেলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ তাদের ৬ষ্ঠ উইকেট খুইয়েছে ৬৯ রানে। বাংলাদেশ তখন ঘোর বিপদে। তখনই ত্রাতা হয়ে এলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই দুজনের ব্যাটে চড়েই বিপর্যয় সামাল দিয়েছে লিটন দাসের দল। বাংলাদেশকে দিয়েছে ধ্বংসস্তুপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর দিশা। দু’জন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে মাথা তুলে লড়লেন।
শুরুতে কিছুক্ষণ লড়ার পর ভারতীয় বোলারদের কোণঠাসা করে রিয়াদ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। লাগসই জবাব দেন সমালোচকদের। সঙ্গে মিরাজ তো অনবদ্য। আগের ম্যাচেই শেষ উইকেট জুটিতে নাটকীয় জয় এনে দেওয়া এই অলরাউন্ডার এবার নিজেকেও ছাড়িয়ে গেলেন। ৫৫ বলে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি।
রিয়াদ সঙ্গ দিয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ শতক পার করেন। রিয়াদও তুলে নেন নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম অর্ধ-শতক। মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি তুলে নেবেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কিন্তু দলীয় ২১৭ রানের সময় ব্যক্তিগত ৭৭ রানে ফেরেন রিয়াদ। উমরান মালিকের বলে ক্যাচ তুলে দেন উইকেট কিপার লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে। ভেঙে যায় রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটি।
২০১৪ সালে ফতুল্লায় তৃতীয় উইকেটে এনামুল হক ও মুশফিকুর রহিমের ১৩৩ রান ছিল এত দিন সর্বোচ্চ। সেটা ছাড়িয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ-মিরাজের জুটি। রিয়াদ ফিরলেও মিরাজকে আটকায় কে? সেঞ্চুরির জন্য শেষ ওভারে তার দরকার ছিল ১৫ রান। শার্দুল ঠাকুরকে দুই বিশাল ছক্কা মেরে সেটা সহজেই করে ফেলেন ডানহাতি এ ব্যাটার। আর সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা মিরপুরের গ্যালারি।