খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা গেলেন এনজিও কর্মকর্তা রাকা সাদিয়া। সোমবার দুপুরে তিনি মারা যান। এর আগে ১৯ নভেম্বর নগরীর মোস্তর মোড়ে একটি কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হন। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই এনজিও কর্মকর্তার পরিবার।
রাকা ডুমুরিয়া উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে। তবে নিহতের পরিবার সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে আঙ্গুল তুলেছেন।
রাকা সাদিয়া বাটিয়াঘাটা উপজেলায় এনজিও পিএমএসএস অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯ নভেম্বর সকালে বাড়ি থেকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শাহাপুর হয়ে অফিসের উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হন। মোস্তর মোড় নামক স্থানে পৌছালে একটি কুকুর তার পথের গতিরোধ করার চেষ্টা করে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে রাকা স্কুটি থেকে রাস্তার ওপর পড়ে যান। সেখানে গুরুতর আহত হলে তাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ডাক্তারের পরামর্শে রাকাকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরের বিষয়টি তখন হয়ে যায় ইতিহাস।
নিহত রাকার মামা ডিবির সাবেক এডিসি কামরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি বাইরে ফিটফাট থাকলেও ভেতরে সদর ঘাট। এ হাসপাতালের নিজস্ব কোন ডাক্তার নেই। চিকিৎসা সেবা নিতে তাদের বাইরে থেকে ডাক্তার ডেকে আনতে হয়েছে। এখানে যে চিকিৎসকরা রয়েছেন তারা তেমন সেবা করতে পারেনি। রাকা সামান্য মাথায় আঘাত পেয়েছিল। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু ভালভাবে এখানে সেবা পায়নি। নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আমাদের প্রবেশ করতে দেয়নি। স্টাফ ও নার্সদের জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাদের জানাতো রোগীর অবস্থা ভাল আছে। আমাদের কখনও তারা সঠিক সংবাদ দেয়নি।
সোমবার দুপুরে আইসিইউ থেকে আমাদের জানানো হয় রাকার অবস্থা ভাল না। দুপুর ২ টায় সেখান থেকে একজন চিকিৎসক বের হয়ে আমাদের জানান, রাকা মারা গেছে। ১০ দিনের চিকিৎসা বাবদ হাসপাতালকে ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তপক্ষ তাদের জানায় এটা একটি পুলিশ কেস। পরবর্তীতে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের সহায়তায় কাগজপত্র প্রস্তত করে লাশটি বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
অপরদিকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রিন্সের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, রাকা ১৯ নভেম্বর এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তখন থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, স্কুটি থেকে পড়ে যাওয়ার পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। সেই থেকে তিনি আইসিইউতে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে মৃত রাকার মামা বলেন, আমরা হাসপাতালের চিকিৎসদের তার অপারেশনের কথা বলেছিলাম, কিন্তু তারা সেটি করেনি। তারা আমার ভাগ্নেকে আইসিইউ রেখে চিকিৎসা দিয়েছেন। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ১৯ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর যে কয়েকজনকে আইসিইউতে ঢুকিয়েছেন তারা কেউ জীবিত ফিরে আসেনি। এটি হাসপাতাল নামের কসাইখানা বলে তিনি উল্লেখ করেন।