আমার সেদিন ছিল নাইট ডিউটি। রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত একটানা ফোর্সের সাথে রাত জেগে ডিউটি করা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। নাইট ডিউটি চলাকালীন সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোন অপরাধ সংঘটিত হলে জবাবদিহি করতে হয় নাইট ডিউটিতে থাকা অফিসারকে। আমার ঐ রাতের ডিউটি এলাকার মধ্যে ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ইংলিশ রোডসহ পার্শ্ববর্তী স্থান সমূহ। ঐ এলাকায় ডিউটি থাকলে রাত বারোটার পর অবশ্যই ইংলিশ রোডের নিষিদ্ধ পল্লীতে চক্কর দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কারণ রাতের আঁধারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা নিষিদ্ধ পল্লীতে আশ্রয় নিতো। তারা যাতে রাতে সেখানে থাকতে না পারে সেজন্য নাইট ডিউটিতে থাকা অফিসার ফোর্সসহ নিষিদ্ধ পল্লীর মধ্যে চক্কর দিলে অপরাধীরা ভয়ে এলাকা ত্যাগ করতো। ইংলিশ রোডের নিষিদ্ধ পল্লীর বাসিন্দারা এই নিয়ম মেনে চলতো। তবুও কিছু কিছু অপরাধী বিভিন্ন মেয়েদের ঘরে গা ঢাকা দিয়ে থাকতো। এমনকি কিছু কিছু তথাকথিত ভদ্রলোকেরাও সেখানে থাকতেন। অবশ্য তাদেরকে পুলিশ কিছু বলতে সাহস করতো না। বরং আমি কোতোয়ালি থানায় যোগদান করার পর ওসি সাহেব আমাকে একদিন সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন-
‘নাইট ডিউটি চলাকালীন কখনও ইংলিশ রোডে গেলে অমুক অমুকে দেখলে সরে এসো। ওদের অনেক উপরে যোগাযোগ আছে’।
ঘটনার রাতে নাইট ডিউটি চলাকালীন আমি অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় ইংলিশ রোডে নিষিদ্ধ পল্লীতে চক্কর দিতে পারিনি। ঠিক ভোর বেলায় শোনা গেল নবাবপুর রোডের গলির ভিতরে একটা লাশ পড়ে আছে। আমি দ্রুত সেখানে হাজির হয়ে দেখলাম আনুমানিক চল্লিশ বছর বয়সের একজন মানুষের মৃতদের রাস্তার উপর পড়ে আছে। তার শরীরে তেমন কোন ক্ষতচিহ্ন ছিল না। শুধু পায়ের উরুতে একটা ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। শীতের রাতে এই আঘাতের জন্য অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হলো।
আমি মৃতদেহটি দ্রুত মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। জরুরী ডাক্তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে লাশ মর্গে পাঠিয়ে দিলেন। আমি বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য রেখে থানায় গেলাম।
ওসি সাহেব কখনও সকাল দশটার আগে থানায় আসতেন না। কিন্তু ঐদিন মার্ডারের সংবাদ শুনে আগেই থানায় এসে বসে ছিলেন। আমাকে দেখেই তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে হত্যাকান্ডের জন্য কৈফিয়ত তলব করলেন। আমি রীতিমতো হিমশিম খেতে লাগলাম। এমন সময় একজন লোক কাঁদতে কাঁদতে থানায় ঢুকে বললেন- নিহত ব্যক্তি তার পরিচিত। উত্তরবঙ্গ থেকে একসাথে মরিচ নিয়ে ঢাকার রায়সাহেব বাজারে বিক্রি করে তারা পাশের একটি হোটেলে ছিলেন। রাতে তিনি হোটেল থেকে বের হয়ে আর ফিরে না আসায় থানায় রিপোর্ট করতে এসেছেন।
ভদ্রলোকের কাছে চেহারার বর্ণনা শুনে বুঝলাম, রাতের নিহত ব্যক্তিই তার লোক। সুতরাং ওসি সাহেবের ধমক আরো বেড়ে গেল। শেষ পর্যন্ত তিনি বললেন- ‘এই ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের আটক না করা পর্যন্ত তুমি বাসায় যেতে পারবে না’।
আমি অসহায় হয়ে ভদ্রলোককে নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করিয়ে লাশ বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলাম। থানায় ফিরে ওসি সাহেবের নির্দেশে একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করলাম। ইতিমধ্যেই সারাদিন পার হয়ে গেল। গতরাতে আটটা থেকে ডিউটি শুরু হয়ে পরের দিন সন্ধ্যা হয়ে গেল। ঘুমে আমার শরীর ঢলে পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু কোন প্রকার নিষ্কৃতি পাওয়া গেল না। রাতের ভিতরে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট আসামি গ্রেফতারের জন্য ওসি সাহেব চাপ সৃষ্টি করতে থাকলেন।
আমি অসহায়ের মতো চারিদিকে সোর্স নিয়োগ করলাম। এক পর্যায়ে সোর্স রুহিদাস জানালো- নবাবপুর রোডের কয়েকজন ছিনতাইকারীকে সে চেনে। তাদের একজন ইংলিশ রোডের একটি মেয়ের কাছে প্রতিদিন যায় এবং ছিনতাই করা টাকা পয়সা তার কাছে জমা রাখে। রাত বারোটার পর গেলে ঐ মেয়েটার ঘরে অবশ্যই তাকে পাওয়া যাবে।
আমি রুহিদাসের কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। এর আগে বেশকিছু মামলার আসামি ধরতে সে আমাকে সাহায্য করেছিল। সুতরাং আমি বাসায় না গিয়ে শত কষ্টের মাঝেও থানায় রয়ে গেলাম। রাত বারোটার পর ডিউটিরত অফিসার ও ফোর্স নিয়ে রহিদাসের দেখানোমতে ইংলিশ রোডের নিষিদ্ধ পল্লীর সেই মেয়েটির ঘরে গিয়ে সন্দেহভাজন সেই আসামিকে পেয়ে গেলাম। মেয়েটির ঘর তল্লাশি করে তেমন কিছু পাওয়া গেল না। নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েরা তাদের কাছে হাতখরচ ছাড়া অন্য কোন টাকা পয়সা রাখলে দালাল ও মাসীরা তা কেড়ে নেয়।
আমাদের টার্গেট হাতে পেয়ে তাকে নিয়ে থানায় গেলাম। ওসি সাহেবকে খুশি করতে গিয়ে নিজে দুইরাত ঘুমাইনি। ওদিকে খুন মামলার তদন্ত নিয়ে উর্ধতন অফিসারদের তাগিদ শুরু হলো। সর্বোপরি নিজের বিবেকের তাড়নায় ঘুমকে তুচ্ছ মনে হলো।
সন্দেহভাজন ধৃত আসামিকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে কোন ফল হলো না। সে কোন কথা স্বীকার করলো না। তার হেরোইনের নেশা কাটতেই রাত কাবার হয়ে গেল। থার্ড ডিগ্রী দেওয়ার চেষ্টা করেও ফল পাওয়া গেল না। বরং সকাল বেলা তাকে পকেটের টাকায় হেরোইন কিনে খাইয়ে রিমান্ডের আবেদন পূর্বক কোর্টে পাঠালে কোর্ট তাকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলো। রিমান্ডে আনার পর সে একটু একটু মুখ খুলতে লাগলো। এক পর্যায়ে রিমান্ডের প্রথম রাতে সে বললো- যারা যারা ছিনতাই করে তারা ইংলিশ রোডের কয়েকটি ভাঙা বিল্ডিং এর ছাদে থাকে। তাদেরকে ধরিয়ে দিতে সে রাজি হলো। আমরা কয়েকজন অফিসার ফোর্সসহ গভীর রাতে তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে লম্বা রশি হাতকড়ার সাথে বেঁধে তার দেখানো সেই ভাঙ্গা বিল্ডিং এ হাজির হলাম। সে ভাঙ্গা সিঁড়ি দিয়ে অনায়াসে উপরে উঠতে লাগলো। আমরা তার পিছু পিছু উঠতে থাকলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে আমরা আর উপরে উঠার সাহস পেলাম না। আমাদের ভারে পুরো বিল্ডিং দুলতে থাকলো। আমরা তাকে উপরে যাবার সুযোগ দিয়ে রশি আস্তে আস্তে ছাড়তে থাকলাম। সে উপরে উঠছে তো উঠছে। আমরা ভাবলাম- তুমি যতই উপরে ওঠো, রশি তো আমাদের হাতে। এক সময় দেখলাম, রশি থেমে গেল। চিন্তা করলাম- আর উপরে ওঠার উপায় নেই। হয়তো আসামি নিচে নামছে। কয়েক মিনিট হয়ে গেল। আসামির কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। আমরা রশি টানতে শুরু করলাম। রশি ফিরে আসলো, কিন্তু আসামি এলো না। হাতকড়া থেকে রশি খুলে কিভাবে আসামি পালিয়ে গেল আমরা কেউ তা বুঝতে পারলাম না।
আমি তখন সেই ভাঙ্গা বিল্ডিং এর উপর থেকে মাথা ঘুরে পড়ে মরার উপক্রম হলাম। রিমান্ডের আসামি সঠিক সময়ে কোর্টে হাজির করতে না পারলে সাসপেন্ড নিশ্চিত। কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না। আমার সঙ্গীয় অফিসারগন গা ছাড়া ভাব নিলেন। কারণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলাম আমি। অতএব আসামির সকল দায়দায়িত্ব আমার উপর।
বিপদ দেখে অন্য সকল অফিসার দায়দায়িত্ব এড়াবার জন্য দ্রুত সরে পড়বার চেষ্টা করলেন। আমার অনুরোধে কেউ কেউ আমাকে সাহায্য করতে রাজি হলেন।আমরা ঠিক করলাম- ভোর হওয়ার আগেই বিষয়টি কাউকে জানতে না দিয়ে যেকোন প্রকারে পলাতক আসামিকে আটক করবো।
আমরা যখন নিষিদ্ধ পল্লীর ভিতরে এইসব আলাপ করছিলাম তখন একটু বেশি সতর্ক ছিলাম। কেউ জানলে সর্বনাশ অনিবার্য। কিন্তু বিধি বড়ই বাম। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়।
আমি আগেই বলেছি, নিষিদ্ধ পল্লীর ভিতরে রাতের বেলা অবস্থান করা নিষিদ্ধ হলেও কিছু কিছু ক্ষমতাধর মানুষ সেখানে থাকতেন, যাদেরকে আমরা কিছুই করতে পারতাম না।
হঠাৎ করে এমন একজন মানুষ আমাদের সামনে এসে বললেন-
‘আমি সব শুনেছি কামরুল ভাই। কোন চিন্তা করবেন না। আমি দরকার হলে পুলিশ কমিশনারকে সব বুঝিয়ে বলবো। এখানে আপনাদের কোন ত্রুটি ছিল না। আপনারা বেশি ভাল করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে’।
এই লোকটিকে আমি ভাল করে চিনতাম। তিনি একটি সনামধন্য পত্রিকার বড় সাংবাদিক ছিলেন। তিনি তার খবরের কাগজে আসামি পলাতকের কাহিনী লিখে ক্রেডিট নিতে একটুও বিচলিত হবেন না, তা আমরা জানতাম।
ঐ সাংবাদিক সাহেব ঘটনা জানার পর ভাবলাম, তিনি আমাদের সামনে থেকে সরে গিয়ে প্রথমে নিজের খরচে ওসি সাহেবকে ফোন করে কৃতিত্ব নিবেন। ওসি সাহেব শুনে আগুন হয়ে আমাদের উপর রাগারাগি করবেন। তার চেয়ে আমরাই ওয়ারলেসে ওসি সাহেবকে জানিয়ে রাখি।
তখন রাত গভীর। ওসি সাহেব অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো বাকী আসামি ধরে আমরা তাকে ওয়ারলেসে জানাবো। তিনি ওয়ারলেসের এক কলেই সাড়া দিলেন। আমি তাকে আসামি পালানোর খবর দিলে তিনি বললেন-
‘কোন কথা বুঝি না। আসামিসহ থানায় আসো। পরে বাকি কথা হবে’।
আমরা মারাত্মক অসহায় হয়ে বাঁচার পথ খুঁজতে লাগলাম। এক পর্যায়ে সোর্স রুহিদাস বললো-
‘চিন্তা করবেন না স্যার। রাতের ভিতরে যেকোন প্রকারে ঐ আসামি খুঁজে বের করবো। একান্তই যদি না পাই তাহলে আমাকে ঐ আসামি সাজিয়ে কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েন। পরে জামিন করে ছাড়িয়ে নিলে চলবে। আপনার জন্য আমি এটুকু করবো’।
রাত শেষ হতে লাগলো। সকালে কী হতে পারে তা আমি জানতাম। মনে মনে ভাবলাম- গতকাল যে মেয়েটির ঘর থেকে আসামিকে আটক করা হয়েছিল তার কাছে হয়তো যেতে পারে। সুতরাং সেই ঘরটি ঘিরে ফেলে তল্লাশি করলাম, কিন্তু কোন ফল হলো না। আসামি বা মেয়েটিকে ঐ ঘরে পাওয়া গেল না। তখন আমাদের সন্দেহ হলো হয়তো ঐ মেয়েসহ সে কোথাও আত্মগোপন করে আছে। অতএব মেয়েটির অবস্থান জানার জন্য তৎপর হলাম। কিন্তু আশেপাশের মেয়েরা জানালো, গতকাল পুলিশ ঐ মেয়ের ঘর থেকে আসামি ধরে নেওয়ার পরেই সে ঘর ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
এমন সময আমার সঙ্গীয় একজন অফিসার বললেন-
‘ঐ মেয়ের সন্ধান পেতে হলে গফুরকে খুঁজে বের করতে হবে। গফুর হচ্ছে এই পাড়ার সরদার। তার কথা সব মেয়েরা শুনতে বাধ্য’।
চললাম গফুরের খোঁজে। কোথায় পাবো গফুরকে। খুঁজতে খুঁজতে ইংলিশ রোডের হোটেল দ্বীনে গিয়ে দেখলাম গফুর মাতাল হয়ে পড়ে আছে। আমাদের দেখে তার হুঁশ ফিরে এলো। আমরা তাকে আমাদের অসহায়ত্বের কথা খুলে বললাম। সে কোন বাক্যব্যয় না করে সোজা আমাদের সাথে নিষিদ্ধ পল্লীতে ঢুকে সকল মেয়েদের গরম করে ফেললো। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের কাঙ্খিত মেয়েটি এসে হাজির হলো। গফুর যে ভাষায় তাকে আসামির সন্ধান দিতে হুকুম করলো তা এখানে বর্ণনা করা যাবে না। কিন্তু মেয়েটি সকল প্রকার ‘কিরে কসম’ কেটে বললো, আসামি তার কাছে আসেনি।
গফুর তাকে আবার সেই একই গালি দিয়ে বললো-
‘ তুই আজ রাতের ভিতর যেখান থেকে পারিস তাকে হাজির করবি। নইলে এই পাড়ায় তুই থাকতে পারবি না’।
গফুরের কথা অমান্য করার সাহস ঐ পল্লীর কারো ছিল না। মেয়েটি আবারও কিরে কসম কাটলো। কিন্তু গফুর নাছোড়বান্দা। এক পর্যায়ে মেয়েটি বললো-
‘ আমার সাথে চলেন। আমার কাছে না আসলেও সে যেখানে যেখানে থাকতে পারে, আমি আপনাদের সেখানে সেখানে নিয়ে যাবো। তবে খুব সাবধানে যেতে হবে। সে খুব চালাক। টের পেলে পালিয়ে যাবে’।
আমরা মেয়েটির পিছনে অনুসরণ করতে করতে অলিগলি পেরিয়ে একটি বড় গোডাউনের কাছে গেলাম। মেয়েটি ঐ গোডাউন দেখিয়ে বললো-
‘ঐ টিনের চালের নিয়ে আর একটা চাল আছে। ঐ চালের মাঝে একটু ফাঁকা জায়গা আছে। ঐ ফাঁকে সে মাঝে মাঝে রাতে ঘুমায়’।
আমি তার কথা বিশ্বাস করে জীবন বাজি রেখে সেই টিনের চালে উঠে দেখি আসামি দিব্যি আরামে ঘুমাচ্ছে। তার হাতে আমাদের সেই হাতকড়া। পাশে হেরোইন খাওয়ার কিছু জিনিসপত্র ।
আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। তাকে বহু কষ্টে নিচে নামিয়ে এনে দেখি মেয়েটি আগেই হাওয়া হয়ে গেছে। তার হাওয়া হওয়ার কারণ বুঝতে আমাদের বিলম্ব হয়নি, তাই আসামির কাছে সব কথা গোপন রেখে আসামি নিয়ে সোজা থানায় চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সকাল হয়ে গেল। আমার জীবনের একটা চরম বিপদ থেকে রক্ষা করলো একজন পতিতা ও নিষিদ্ধ পল্লীর একজন সরদার। তারা ইচ্ছা করলে আমাকে সাহায্য না করলেও পারতো। কিন্তু তাদের মানসিকতা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। শুধুমাত্র পেশার কারণে সব মানুষকে ছোট করে দেখতে নেই তা আরো একবার উপলব্ধি করলাম।
এরপর একদিন গফুর ও সেই মেয়েটিকে ধন্যবাদসহ কিছু টাকা দিতে গেলে তারা দুজনেই সম্মানের সাথে টাকা নিতে অস্বীকার করলো। এমনকি ২০০৮ সালে আমি পুনরায় কোতোয়ালি থানার ওসি হিসেবে যোগদান করে গফুরকে খুঁজে বের করে থানায় নিয়ে সেই কথা মনে করিয়ে দিলে সে আবারও আমাকে সম্মানের সাথে এড়িয়ে গেল। নিষিদ্ধ পল্লী উচ্ছেদ হওয়ার ফলে সেই মেয়েটির কোন খবর নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
আনন্দ
এই ঘটনায় আনন্দের তেমন কিছু ছিল না। তবে শিক্ষার সুযোগ হয়েছিল অনেক।
যেমন- আমরা যাদের পতিতা বলে হেয় করি তাদের মধ্যেও বিশ্বস্ততা ও মানবতা আছে।
পতিতা পল্লীর সরদার হলেও কেউ কেউ বিশ্বস্ত হতে পারে।
ঐ মেয়েটি ও গফুর দুজনেই আমার কাছে টাকা দাবী করলে আমি বাধ্য হয়ে দিতাম। কিন্তু কেউই আমার কাছ থেকে টাকা আশা করেনি।
একজন সোর্স আমাদের বিপদে নিজে আসামি সেজে জেলে যাওয়ার প্রস্তাব দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি।
বেদনা
আসামির হাতের রশি কিভাবে হাতকড়া থেকে সহজে খুলে গেল, তা আজও আমার অজানা রয়ে গেছে।
তার হাতকড়া থেকে রশি খুলে গিয়েছিল, নাকি কেউ খোলার মতো করে বেঁধে দিয়েছিল। এই প্রশ্ন আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। চলবে…
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, সোনামুখ পরিবার। (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অব.)