ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পশ্চিম জাভায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩১০ জনে, সেই সঙ্গে এখনও সেখানে নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ২৪ জন। নিখোঁজদের সবাই এবং নিহতদের অধিকাংশই প্রদেশের সিয়ানজুর শহরের।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুহারিয়ানতো। অন্য অনেক ইন্দোনেশিয়ার মতো তারও নাম একটিই।
সুহারিয়ানতো বলেন, ভূমিকম্পের কারণে সিয়ানজুর শহরের ৯০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর ধসে গেছে, অনেক জায়গায় ভূমিধসও হয়েছে। সেসব ধ্বংসস্তুপ ও মাটির নিচে এই নিখোঁজরা আটকা আছেন।
দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার কর্মীরা এখনও তাদের উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন সংস্থাপ্রধান।
২১ নভেম্বর,সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টা ২০ মিনিটের দিকে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পশ্চিম জাভায় ব্যাপক প্রাণঘাতী এই ভূমিকম্পটি হয়। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।
পশ্চিম জাভার পর্বতবেষ্টিত শহর চিয়ানজুর ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হওয়া এই ভূকম্পের কম্পণ ৭৫ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত রাজধানী জাকার্তাতেও অনুভূত হয়েছে।
১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী প্রবল কম্পনে সিয়ানজুরের আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসে, এ সময় বহু ভবন ধসে পড়ে।
রাতেই সিয়ানজুরের এক হাসপাতালের পার্কিং এলাকা আহতদের ভিড়ে ভরে যায়, অনেককে সেখানেই অস্থায়ীভাবে তৈরি তাঁবুতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা কর্মীরা টর্চের আলোতে আহতদের ক্ষত সেলাই করেন।
স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সেই হাসপাতালের পার্কিং এলাকার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে।
ভূমিকম্পে সিয়ানজুর ও জাকার্তাসহ অন্যান্য শহরে ২ হাজার ২ শ’র বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি জাকার্তায় কয়েক সেকেন্ড ধরে অনুভূত হয়েছে। এ সময় নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার দপ্তরগুলো থেকে কিছু লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা সংস্থার বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সিয়ানজুর এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ও একটি মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যোগাযোগও বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানতে কর্মকর্তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে সিয়ানজুর শহরের ক্ষয়ক্ষতির নানা চিত্র।
২৭ কোটি মানুষের দেশ ইন্দোনেশিয়া তথাকথিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার (প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার) ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এ অঞ্চলটিতে ভূত্বকের কয়েকটি পৃথক টেকটোনিক প্লেট এসে মিলিত হওয়ায় এখানে ঘন ঘন ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাতের মতো ঘটনা ঘটে।