বাগেরহাটের চিতলমারতে সরকারী এমপিওভুক্ত দাখিল মাদ্রাসার অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করায় এক শিক্ষার্থীর মাকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে মারধর করে এলাকাছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। মারধরের সময় তার ডান কানের লতি ছিড়ে যায় বলে ভুক্তভোগী মা জানান।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) আত্মগোপনে থাকা ওই মা নিজেকে কুমিল্লা আদালতের শিক্ষানবীশ আইনজীবি দাবি করে সাংবাদিকদের জানান, সরকার যখন সকল শিশুর বিনাবেতনে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তখন চিতলমারী দাখিল মাদ্রাসায় ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা করা হচ্ছে। তার প্রতিবাদ করায় মারধর করে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে তাড়ানো হচ্ছে! তিনি চান, ওই মাদ্রাসার ভিতরে নুরানী বিভাগ নামে ব্যক্তিগতভাবে স্বতন্ত্র প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে টাকা হাতিয়ে নেয়া বন্ধ হোক। এছাড়াও তার উপর অত্যাচারের প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চিতলমারী উপজেলা সদর ইউনিয়নের আড়ুয়াবর্নি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য মো. খালেকুজ্জামানের মেয়ে রুখসানা বিনতে জামান ইউএনওর কাছে ওই অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তার স্বামী কুমিল্লায় একটি ওষুধ কোম্পানীতে চাকুরী করেন। আর রুখসানা বিনতে জামান কুমিল্লা আদালতে জেষ্ঠ্য এক আইনজীবির সহকারী হিসেবে শিক্ষানবীশ আইনজীবির দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সন্তান মো. ইব্রাহিম খান নানাবাড়িতে থেকে চিতলমারী দাখিল মাদ্রাসায় নার্সারী শ্রেণিতে পড়ে। তার বেতন বাবদ প্রতি মাসে ২৫০ টাকা দিতে হয়। ‘চিতলমারী দাখিল মাদ্রাসা (নূরানী ও প্রি-ক্যাডেট বিভাগ)’ নামক এই শিক্ষা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এসএম ইদ্রিসুর রহমান এবং পরিচালক কামরুল ইসলাম বাবুল। এই ব্যক্তিগত শিক্ষা বিভাগে প্লে, নার্সারী, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার ছেলের মতো সবাইকে প্রতিমাসে ২৫০ টাকা করে দিতে হয়। এই অনিয়মের প্রতিবাদ করায় মারধর খেয়ে ‘পাগল’ খেতাব পেয়ে প্রাণভয়ে এখন আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে! এমন বাংলাদেশ তো আমাদের প্রত্যাশা নয়!
রুখসানা বিনতে জামানসহ এলাকাবাসীর পক্ষে ১০ জন নারীর স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ গত ২২ নভেম্বর চিতলমারীর ইউএনও এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। অভিযোগে তারা জানান, চিতলমারী দাখিল মাদ্রাসায় ইবতেদায়ি বিভাগ চালু আছে। কিন্তু তা কৌশলে বন্ধ রেখে ব্যক্তিগতভাবে নূরানী ও প্রি-ক্যাডেট বিভাগ ২০১৮ সালে চালু করা হয়। ফলে গরীব পরিবারগুলো সরকারী সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সরকারী ইবতেদায়ি শিক্ষা কার্যক্রম পরিপূর্ণভাবে চালু করে ওই নূরানী বিভাগ নামক প্রাইভেট শিক্ষাদান বন্ধ করা হোক।
এই ব্যাপারে চিতলমারী দাখিল মাদ্রাসা (নূরানী ও প্রি-ক্যাডেট বিভাগ)’র পরিচালক কামরুল ইসলাম বাবুল জানান, ২০১৮ সালে চিতলমারী দাখিল মাদ্রাসার সুপার এসএম ইদ্রিসুর রহমান তাকে ডেকে এই নূরানী ও প্রি-ক্যাডেট বিভাগ খুলতে বলেন। তখন থেকেই মাদ্রাসার ভিতরে তিনি সেটা পরিচালনা করছেন। ওই নারীকে মারধর করেননি কিংবা পাগল বলে এলাকা হতে তাড়িয়েও দেননি বলে তিনি দাবি করেন।
চিতলমারী দাখিল মাদ্রাসা (নূরানী ও প্রি-ক্যাডেট বিভাগ)’র প্রতিষ্ঠাতা এসএম ইদ্রিসুর রহমান মোবাইলে বলেন, ‘ওই মহিলার (রুখসানা বিনতে জামান) ‘মাথাখারাপ’ মানে ‘পাগল’। তাই অযথা অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে।’ তার এই উত্তর শুনে সাংবাদিক জানতে চায়, তাকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন কিসের ভিত্তিতে বলছেন? উত্তরে এসএম ইদ্রিসুর রহমান জানান, এটা তাঁর মনে হয়েছে। নইলে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে কোন মহিলা অভিযোগ করতে পারে? ওই মহিলা যে ‘পাগল’ সে ব্যাপারে তাঁর কাছে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সনদপত্র নেই বলে জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. কামরুননেছাকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন দিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা জানান, তিনি অভিযোগটি পেয়েছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তার প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।