গুমের শিকার সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি) এবং যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনকে ফেরত পেতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। তারা বলেছেন, যার সন্তান গুম হয়, শুধু তারাই বোঝেন সন্তান হারানোর কি বেদনা।
‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনায় আয়োজিত মানববন্ধন ও র্যালিতে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি তারা এ দাবি জানান। মহানগরীর খানজাহান আলী রোডস্থ জাতিসংঘ পার্কের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ ও মানবাধিকার কর্মীদের সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক’ যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান দিবসের বিবৃতি পাঠ এবং সভাপতিত্ব করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালীন অনুষ্ঠিত সমাবেশে গুমের শিকার যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের বৃদ্ধা মা সেলিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার ছোট ছেলে মো. রেজোয়ান হোসেনকে ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট বেনাপোল থানা পুলিশ আটক করে। পরবর্তীতে ওসি অপূর্ব হাসানের নেতৃত্বে তাকে গুম করা হয়। এ ঘটনায় তারা ভয়ে মামলা করার সাহস পাননি। দীর্ঘ ৬ বছরেও তার সন্তানের সন্ধান না পেয়ে তারা (মা-বাবা) অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সব সময় দুশ্চিন্তা ও ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। কেন তার ছেলেকে গুম করা হলো? এ প্রশ্ন রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অবিলম্বে তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
গুমের শিকার সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি)’র বাবা মো. আব্দুর রাশেদ এবং বোন রাহিমা সুলতানা নিশি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই হিমেলের নেতৃত্বে পুলিশ জনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু থানায় কয়েকদিন রেখে তাকে গুম করা হয়। গত প্রায় ৭ বছরেও তার সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। ছেলে ও ভাইকে হারিয়ে তাদের সংসার তছনছ হয়ে গেছে। তার মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের কঠোর শাস্তি এবং ডা. জনিকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কর্মসূচীতে বক্তৃতা করেন নারী নেত্রী রেহানা ঈসা, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা শাখার আহবায়ক মুনীর চৌধূরী সোহেল, নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা’র জেলা সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, মানবাধিকার কর্মী শেখ আব্দুল হালিম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়াবৃক্ষের প্রধান নির্বাহী মাহবুব আলম বাদশা নারী নেত্রী ইসমত আরা কাকন। স্বাগত জানান হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ও সাংবাদিক কেএম জিয়াউস সাদাত।
উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট শেখ মো. আলমগীর আশরাফ, কেসিসি’র সংরক্ষিত আসনের সাবেক কাউন্সিলর মোসাঃ আনজিরা খাতুন ও আফরোজা জামান, মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট মো. শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক এম এ আজিম, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের গৌতম দে হারু, মো. শওকত হোসেন, মো. তামিম হাসান, মোঃ শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ, মোঃ রিপন হোসেন, এ্যাডঃ কাজী রুমিসা রুমু, রুবিনা বেগম, প্রদীপ সাহা, মোঃ শওকত হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. জাফরী, রোজিনা খাতুন, শারমিন আক্তার, মো. বিপ্লব প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালের এই দিনে ডোমিনিকান রিপাবলিকে সহিংসতায় তিন নারী মারা যান। তাদের স্মরণ করে ১৯৮১ সালে ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতনবিরোধী দিবস ঘোষণা করা হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই