আদালতের আদেশ অমান্য করায় যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও এসআই লিটন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন আদালত। একইসাথে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের এ দুই কর্মকর্তাকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথ্যায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দীন হোসাইন এ আদেশ দেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর মামলার ধার্য তারিখে আদালত আদেশে বলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী থানাকে জব্দকৃত একটি পিকআপ হস্তান্তরের আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু সে আদেশ মানা হয়নি। আদেশ না মেনে উল্টো জিম্মায় না দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে আদালতে অবহিতকরণ পত্র দেয়া হয়েছে। যা জেলা জজ আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ স্বরুপ হয়েছে। এছাড়া আদালতের আদেশ অমান্য করাও অবমাননার শামিল। এমতাবস্তায় ওই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না সে মর্মে আগামি ২৯ সেপ্টেম্বর সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি রাত নয়টায় যশোর রাজারহাট মোড়ে দাড়িয়ে থাকা একটি পিকআপকে বেপোরোয়া গতিতে আসা অপর একটি পিকআপ ধাক্কা দেয়। এতে ওই গাড়িতে থাকা চুয়াডাঙ্গা জেলার ছোট শলুয়া গ্রামের মহাতাব মিয়ার ছেলে শাহবুল মিয়া নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়। এসময় চালক পালিয়ে যায়। পরে আহত শাহবুলকে হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পিকআপটি জব্দ করে (গাড়ি নং ঢাকা মেট্রো ড-১২-১৪৩৬)। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শিমুল হোসেন বাদী হয়ে ওই গাড়ির অঙ্গাত চালককে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
এদিকে, এই পিকআপটির মালিকানা দাবি করে জিম্বায় নেয়ার জন্য যমুনা ব্যাংক লিমিটেড ও র্যানকন অটোমোবাইলস লিঃ এর পক্ষে র্যানকন এর রিকভারি অফিসার রমজান আলী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন জানান। পরে আবেদন না মঞ্জুর হলে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। গত ২৭ আগস্ট উভয়পক্ষের শুনানী শেষে গাড়িটি দরখাস্তকারীর জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক। পরে সে আদেশের অনুকুলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানাকে জব্দকৃত গাড়ি আবেদনকারীর জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আবেদনকারী গাড়িটি ফেরত আনতে গেলে কোতোয়ালি থানা থেকে তাকে গাড়ি দেয়া হয়নি। তিনি গাড়িটি জিম্মায় না পেয়ে আদালতে হাজির করার আবেদন জানান। একই সাথে তার সাথে অশোভন আচরণ করা হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে দেয়া আবেদনে তিনি জানান, আদালতের আদেশে গাড়ি ফেরত পাবার জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় হাজির হয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা লিটম মিয়া তার কাছে উৎকোচ দাবি করেন। এ টাকা দিতে রাজি না হলে এসআই লিটম মিয়া তাকে জানান, আদালতের আদেশ তিনি মানেন না। উৎকোচ না দিলে ওই গাড়িটি মাদক মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হবে। গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা হবে। একইসাথে আবেদনকারীকে পেন্ডিং মামলায় চালান দেয়ার ভয় দেখানো হয় বলে আদালতে দেয়া দরখাস্তে উল্লেখ করেন রমজান আলী।
এদিকে, এ ঘটনার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা লিটন মিয়া ওই গাড়ি জিম্বায় না দিয়ে আদালতে একটি লিখিত অবহিতকরণ দরখাস্ত দেন, তাতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার মুল আসামি এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এমতাবস্তায় গাড়িটি জিম্বায় দিলে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ এম কে