সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরস্থ থানার মোড় এলাকায় অবস্থিত সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অ্যানেস্থেসিস্ট না থাকায় গত প্রায় দশ মাস ধরে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। ফল চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দরিদ্র ও সাধারণ পরিবারের প্রসুতি গৃহবধূরা। মোটা অংকের টাকা খরচ করে তাদেরকে শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সিজার করাতে হচ্ছে।
এদিকে সাধারণ রোগিদের অভিযোগ, সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অ্যানেস্থেসিস্ট না থাকার সুযোগে এখানে কর্মরত চিকিৎসক ডা. লিপিকা বিশ্বাস শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে রোগি দেখে সময় পার করেছেন। দিনভর তিনি ওই ক্লিনিকে রোগি দেখেন। এখানে আসা রোগিদেরকে কৌশলে ওই ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ডা. লিপিকা বিশ্বাস ওই সব রোগিদের সিজারিয়ান অপারেশন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বার বার অবহিত করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানের সময় কোনো জটিলতা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে গর্ভবতী মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন করা না হলে মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি থাকে। এজন্য সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারিয়ান অপারেশনের সুযোগ না থাকায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সাহস পাচ্ছেন না অনেকে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা গ্রামের গৃহবধূ রেবেকা বেগম (২৬)। স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের জন্য এসেছিলেন শহরের সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে। তবে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় সেখানে সন্তান জন্ম দিতে পারেননি তিনি। বাধ্য হয়ে তাকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হয়। এতে তার মোটা অংকের টাকা চিকিৎসা খরচের টিছনে ব্যায় হয়েছে। যার চাপ পড়েছে সংসারের উপর।
শুধু রেবেকা নয়, তার মতো প্রতিদিন সাতক্ষীরার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন গর্ভবতী মায়েরা।
সাতক্ষীরার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি অ্যানেস্থেসিস্ট মুজিবুর রহমান অবসর নেন। তখন থেকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অ্যানেস্থেসিস্ট পদটি শূন্য রয়েছে। ১০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সবধরনের সিজারিয়ান অপারেশন। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সাল থেকে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটরের পদটি শূন্য থাকায় মা ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
সাতক্ষীরার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা (ক্লিনিক) ডা. লিপিকা বিশ্বাস বলেন, অ্যানেস্থেসিস্ট না থাকায় বর্তমানে এখানে সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা দ্রুত এখানে একজন অ্যানেস্থেসিস্ট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
খুলনা গেজেট/ টি আই