খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত
  শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে নিহত ২
প্রাণ যায় যায় নদের

ভৈরবের প্রাণ যায়, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা 

শাহিন হোসেন, অভয়নগর 

যশোরের শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ার স্পন্দন ভৈরব নদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা ।  নদীর তলদেশ পলিজমে ভরাট হয়ে আসছে। দু’তীরেই চর জাগতে শুরু করেছে। অব্যাহত দখল ও দূষন, অপরিকল্পিত নদী ড্রেজিং, বিআইডব্লিউটিএ এর উদাসীনতা, অপরিকল্পিত ঘাট নির্মাণ ও ঘাট মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতায় এই দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, অচিরেই পায়ে হেটে পার হওয়া যাবে নওয়াপাড়ার ভৈরব নদী।

আর পরিস্থিতি এমন হলে মুখ থুবড়ে পড়বে এ নদী বন্দর। ধ্বংসের আশংকা রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ী মোকাম নওয়াপাড়া বাণিজ্য বন্দরে। বেকার হয়ে পড়বে ১৭ হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক। পথে বসবে শতশত ব্যবসায়ী। কেবল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ও ব্যবসায়ী নয় পরোক্ষভাবে নদী বন্দরের সাথে যুক্ত মোটর শ্রমিক ও ব্রোকার ইউনিয়নের শ্রমিকরাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ভেঙ্গে পড়বে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। দেখা দেবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতর চরম অবনতি।

ফলে নদী দখলদারদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারী ঘাট মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএকে নদী বাঁচাতে অচিরেই কার্যকর ভূমিকা গ্রহনের দাবি তুলেছেন সচেতন মহল। তারা সঠিকভাবে নদী খনন ও গাইডওয়াল নির্মাণের দাবি তুলেছেন। সম্প্রতি এ দাবিতে নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে মানববন্দনও করেছে বেশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অর্ধ কিলোমিটার জুড়ে নদীর দুই তৃতীয়াংশ চর জমে ভরাট হয়েছে। এছাড়া নদী বন্দরের নওয়াপাড়া জুট মিল সংলগ্ন এলাকা, বেঙ্গল খেয়াঘাট থেকে নওয়াপাড়া মাছ বাজার পর্যন্ত, নওয়াপাড়া গ্লোবঘাট, তালতলা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় অধিক পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীতে খেয়াপারাপারেও চরম বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে।

বিআইডব্লিটিএ সূত্র জানায়, গত ২০২১ সালের ২৪ জুলাই থেকে বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কার তথা ড্রেজিং শুরু হয়। বিআইডব্লিউটিএ এর দুইটি ড্রেজার মেশিন ভৈরব নদে এ খনন কাজ শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই লোক দেখানো ড্রেজিং কার্যক্রম চালায় বিআইডব্লিউটিএ। এবং একটি ড্রেজার বছর ব্যাপিই বন্ধ থাকতে দেখা যায়।

অপর মেশিনটি দিয়ে দায়সারা ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হয় যা নদী বন্দরের কোন কাজেই আসেনি। স্থানীয়দেও অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশল (সংস্কার) বিভাগের আওতায় ভৈরব নদ সংস্কারের নামে চলা ড্রেজিং কার্যক্রমে দু’ চারজন বালু ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষা ছাড়া বন্দরের কোন কাজে আসেনি। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর উক্ত মেশিনটিও খুলনা অংশে কাজ করছে। ফলে ভৈরব নদের নওয়াপাড়া অংশের বেহাল দশা আরও শোচনীয় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মন্ডল বলেন, ভৈরব নদকে ঘিরে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও ব্রোকার ইউনিয়নের ৫০ হাজারের অধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। রয়েছে নদী নির্ভর শতশত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার। তিনি দাবি করেন, এ নদীকে ঘিরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লক্ষাধিক মানুষ টিকে আছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ এ বন্দরের ক্ষেত্রে বরাবরই চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ফলে নদীটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌছে গেছে। আমরা একের পর এক আন্দোলন সংগ্রাম করে আসলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি অচিরেই নদী খননসহ গাইড ওয়াল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সাবেক নদী রক্ষা কমিটির নেতা এনামুল হক বাবুল বলেন, ভৈরব নদী না বাঁচলে ধ্বংস হয়ে যাবে নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী মোকাম। পথে বসবে হাজার হাজার পরিবার। তিনি বিআইডব্লিউটিএ এর উদাসীনতা, ঘাট মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দখলকে দায়ি করে অচিরেই ভৈরব নদী বাঁচাতে বন্দর ব্যবহারকারী, স্থানীয় সচেতন মহল ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে পরিকল্পিত ভাবে নদী খননের পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।

নওয়াপাড়া সার, খাদ্য, শস্য ও কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ)এর সহ সভাপতি শাহ জালাল হোসেন বলেন, এ মোকামে প্রতিনিয়ত ২শত থেকে ৩ শত ছোট বড় জাহাজ কার্গো, বার্জ, সার, গম, ভুট্টা, সিমেন্ট, ভুষি মাল ও কয়লা নোঙ্গর করে থাকে । বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই বন্দরে পন্য দ্রব্য উঠা নামা করে। ড্রেজিং না করলে ধ্বংস হয়ে যাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ী মোকাম বাণিজ্য বন্দর। বেকার হয়ে পড়বে ১৭ হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক।পথে বসবে শতশত ব্যবসায়ী।

এ ব্যপারে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের সহকারি পরিচালক মাসুদ পারভেজ নদী দখল, দূষণ ও নদী ভরাট হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নওয়াপাড়া নদী বন্দর রক্ষায় ভৈরব নদ খনন ও গাইড ওয়াল নির্মানের পাশাপাশি বন্দর ব্যবহার ধ্বংসের আশংকা রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ী মোকাম নওয়াপাড়া বাণিজ্য বন্দরে। বেকার হয়ে পড়বে ১৭ হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক। পথে বসবে শতশত ব্যবসায়ীদের নানামুখি সুযোগ সৃষ্টিতে বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যে বিআডব্লিউটিএ পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। এ পরিকল্পনা গৃহিত হলে নওয়াপাড়া নদী বন্দর তার হারানো যৌবন ফিরে পাবে। তিনি দাবি করেন, নওয়াপাড়া নদী বন্দর রক্ষায় সম্প্রতি অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে যা চলমান থাকবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!