নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল পুরো বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু পরের ম্যাচেই মুদ্রা উল্টো পিঠ দেখতে পেল সাকিব আল হাসানের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে দল শুধু ম্যাচই হারেনি, অলআউট হয়েছে মাত্র ১০১ রানে। ১০৪ রানে হেরে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ দলের অভিষেক ম্যাচটা রাঙাতে পারলেন না সাকিব-সৌম্যরা।
২০৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে স্কোরবোর্ডে দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার মিলে যোগ করেন ১৭ রান। কাগিসো রাবাদকে দুটি ছক্কা হাঁকান সৌম্য। প্রথম ২ ওভারে ২৬ রান নিয়ে আশাও জাগিয়েছিলেন দুজন। কিন্তু তৃতীয় ওভারে এসে উইকেট জোড়া উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এনরিক নরিকাকে অ্যাক্রোস দ্য লাইন খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসে ক্যাচ দেন সৌম্য।
বাঁহাতি এই ওপেনার আউট হয়েছেন ৬ বলে ১৫ রান করে। একই ওভারের চতুর্থ বলে আউট হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। নরকিয়ার ১৪৮ কি.মি. গতির বলে বোল্ড হয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। শান্তর ব্যাট থেকে এসেছে ৯ রান। নিজের পর ওভারে সাকিব আল হাসানকেও ফেরান নরকিয়া। ডানহাতি এই পেসারের বলে লেগ বিফোর হয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাজঘরে ফেরেন ১ রানে।
এরপর আফিফ হোসেনকে এক রানে বিদায় করেন রাবাদা। ওয়েন পার্নেলেকে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরার পরও ক্রিজে আটকে ছিলেন লিটন দাস। একপ্রান্তে রান যোগ করেন যাচ্ছিলেন স্কোরবোর্ডে। কিন্তু কোন ব্যাটারই তাকে সঙ্গ দিতে পারছিলেন না। মেহেদি মিরাজ ১১, মোসাদ্দেক হোসেন ০ ও নুরুল হাসান ২ রানে তাবরাইজ শামসি ও কেশব মহারাজের ফাঁদে পা দিলে ৭৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
এক প্রান্তে লড়াই করতে থাকা লিটন শামসির তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরলে তখনই ম্যাচ শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ৩১ বলে ৩৪ রান করে তিনি ফিরলে শেষ ব্যাটারদের চেষ্টায় দলীয় ১০০ পার করে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই নরকিয়া বোল্ড করেন তাসকিনকে। ১০১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিল বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুতেই টস ভাগ্যে জয়ী হতে পারেননি সাকিব আল হাসান। প্রথমে ব্যাটিং করে রাইলি রুশোর সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৫ রান সংগ্রহ করেছে টেম্বা বাভুমার দল।
টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা সাউথ আফ্রিকাকে শুরুটা ভালো করতে দেয়নি বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলে তাসকিন আহমেদের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে টেম্বা বাভুমা ২ রান নিলেও এরপর তাকে চেপে ধরেন ডানহাতি এই পেসার। প্রথম ওভারের শেষ বলে তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেট কিপার নুুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে ক্যাচ দেন বাভুমা। সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক আউট হয়েছেন ২ রানে।
তাসকিনের পরের ওভারে রিভিউ নষ্ট করে বাংলাদেশ। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া বল খেলতে গিয়ে মিস করেন রাইলি রুশো। সেসময় রিভিউ নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। রিপ্লেতে দেখা যায় বল ও ব্যাটের কোন স্পর্শ হয়নি। তাতে রিভিউ হারায় বাংলাদেশ।
এদিকে একই ওভারে টানা দুটি নো বল দেন তাসকিন। প্রথমবার মিস করলেও পরের ফ্রি হিট বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মারেন ডি কক। তাসকিনের সেই ওভার থেকে আসে ২১ রান। এরপর মিনিট দশেকের বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকলেও মাঠে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন দুজন। কোন পরিকল্পনা বা চেস্টাই কাজে আসছিল না এই জুটির বিপক্ষে।
তাসকিন, হাসান, মুস্তাফিজ এবং সাকিবদের ওপর চড়াও হয়ে খেলে ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৯৬ রান যোগ করে প্রোটিয়ারা। দলীয় ১০০ পুরণের আগেই ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রুশো। এর খানিক পর ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পান ডি ককও। ১৪ ওভারের আগেও দলীয় ১৫০ রানে পৌঁছে যায় আফ্রিকা, নিজেদের মাঝেও দেড়শ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা।
কোন পরিকল্পনা কাজে না আসায় আফিফ হোসেনকে বোলিংয়ে এনে ব্রেক থ্রু পায় বাংলাদেশ। এই স্পিনারকে বাউন্ডারি লাইনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন কক। ৩৮ বলে তিনি ৬৩ রানে ফিরলে ট্রিস্টান স্টাবসকে ৭ রানে আউট করেন সাকিব।
৩ উইকেট হারালেও ব্যক্তিগত ৫২ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন রুশো। তবে মাইলফলকে পৌঁছে আরও চড়াও হতে গিয়ে লিটন দাসের হাতে সাকিবের ওভারে আউট হন তিনি। ৫৬ বলে ১০৯ রান করেন রুশো। সে সময় প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ১৮.৩ ওভারে ১৯৭।
শেষ ৯ বলে আইডেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার মিলে দলকে ২০০’র ওপর নিয়ে গেলেও হাসানের উইকেট হয়ে ফেরেন মার্করাম। শেষ ২ বলে পারনেল কোন রান না নিতে পারলেও ২০৫ রানের পুঁজি নিয়ে মাঠ ছাড়ে আফ্রিকা। সাকিব ৩৩ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে ২৫ রান দিলেও কোন উইকেট পাননি মুস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশকে করতে হবে ২০৬ রান।