খুলনার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী গভঃ ল্যাবরেটরী হাই স্কুল। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৭ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১ হাজার ২০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে।
খানজাহান আলী থানার কুয়েট রোডের উত্তর পার্শ্বে বিদ্যালয়টির অবস্থান। রোডটির একই পার্শ্বে আরো ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টিচার ট্রেনিং কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ ৫ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলসহ অন্য পাঁচটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কুয়েট রোড থেকে দুই থেকে তিন ফুট নীচুতে অবস্থিত। দেড় বছর পূর্বে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষ ৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা বরাবর উত্তর পার্শ্বে তাদের ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে স্থানটি বালি দিয়ে ভরাট করে দেয়। বালি ভরাটের স্থানটিতে উক্ত ৬টি প্রতিষ্ঠানের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নালা /খালটি বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে সামান্য বৃষ্টিতেই গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলসহ অন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
সর্বশেষ সিত্রাং এর প্রভাবে অতি বর্ষণের ফলে প্রতিষ্ঠান ৬টি স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি ঢুকে যায় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রশাসনিক ভবন ক্লাসরুম, প্রশিক্ষণ রুম, আবাসিক হল, অতিথি ভবনসহ ফ্যামিলি কোয়ার্টারটার গুলিতে। পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানগুলির অনেক আসবাবপত্র। বন্ধ হয়ে যায় একাডেমিক, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল সরজমিনে যেয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সামনে থেকে পানি সরে গেলেও স্যাঁতস্যাঁত, নোংরা, দুর্গন্ধময় পরিবেশ বিরাজ করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার মাঠটিতে পানি থৈ থৈ করছে। অধিকাংশ শ্রেণীকক্ষ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামাজ পড়ার কক্ষসহ প্রশাসনিক ভবনের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের স্থানটিতে পানি জমে রয়েছে।
গত দেড় বছর থেকে প্রতিনিয়ত এভাবে পানি জমে থাকার ফলে এবং বাইরের নোংরা, আবর্জনাযুক্ত, ময়লা, অস্বাস্থ্যকর,দূষিত পানি প্রবেশ করার ফলে প্রশাসনিক ভবনসহ শ্রেণিকক্ষগুলো স্যাঁতসেতে, নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিণত হয়েছে বলে এ প্রতিবেদককে জানালেন বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তারা আরো জানান, বিদ্যালয়ের মাঠে প্রতিনিয়তঃ পানি জমে থাকার ফলে মাঠের ঘাস পঁচে এবং ড্রেনের ময়লা পঁচে বিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে দুর্গন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শ্রেণিকক্ষ গুলিতে স্যাঁতসেতে পরিবেশ বিরাজ করার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায়শই জ্বর কাঁশি, সর্দি, এজমা, শ্বাসকষ্ট, এলার্জিজনিত রোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ের আশেপাশের কীটপতঙ্গ শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
এদিকে অস্বাস্থ্যকর, নোংরা এবং দুর্গন্ধময় পরিবেশে গত দেড় বছর ধরে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারেও অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত এ সমস্যার সমাধানের জন্য বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গতকাল থেকে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম ও অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। বাকী ৫ টি সরকারি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে প্রতিভাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও খুলনা উচ্চ মাধ্যমিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর কার্যক্রমও অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে।