যুক্তরাজ্যের নয়া কুইন কনসর্ট ক্যামিলা নাকি কোহিনূর হীরা খচিত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মুকুট পরতে পারবেন না, ব্রিটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের আনুষ্ঠানিক অভিষেকের সময়ে। ভারতীয় জনতা পার্টি সতর্ক করার পর বাকিংহাম প্যালেসের কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছেন বলে জানা গেছে।
বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে কুইন কনসর্ট ক্যামিলার মাথায় কোহিনূর উঠলে, তা ভারতীয়দের মনে ঔপনিবেশিক অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি উসকে দিতে পারে।
২০২৩ সালের ৬ মে ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান। বিজেপি ব্রিটিশ রাজপরিবারের কোহিনূর হীরা ব্যবহার করার রীতির তীব্র বিরোধিতা করেছে, যা তারা দাবি করে যে এটি ভারতের।
তবে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানও রত্নটির মালিকানা দাবি করেছে। একজন বিজেপি মুখপাত্র দ্য টেলিগ্রাফ, ইউকে বলেছেন-” ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক এবং মুকুটে কোহিনূরের ব্যবহার ঔপনিবেশিক অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। অতীতের নিপীড়নের স্মৃতি বেশির ভাগ ভারতীয়েরই খুব কম মনে আছে। পাঁচ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ভারতীয়দের পাঁচ থেকে ছয় প্রজন্ম একাধিক বিদেশী নিয়মের অধীনে কাটিয়েছে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর নতুন রানী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক এবং কোহিনূরের ব্যবহার কিছু ভারতীয়কে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দিনগুলিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
”প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে রাজ্যাভিষেকের সময়ে কোহিনূর হীরাটি মুকুট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে বা নতুন রাজা ও রানী রাজকীয় সংগ্রহ থেকে অন্য কোনো মুকুট ব্যবহার করতে পারেন। কোহিনূর সমন্বিত মুকুটটি ১৯৩৭ সালে তার স্বামী রাজা জর্জ ষষ্ঠের রাজ্যাভিষেকের সময় রানী এলিজাবেথের মায়ের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পরে, এটি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে যায়। তাকে শেষবার ২০১৬ সালের স্টেট ওপেনিংয়ে মুকুটটি পরতে দেখা গেছে।
মুকুটটিতে মোট ২,৮০০টি হীরা রয়েছে। তবে, মুকুটটির শোভা অনেকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে ১০৫ ক্যারেটের কোহিনূর হীরা।
এটি ২০০২ সালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় রানীর কফিনে স্থাপন করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে লন্ডন টাওয়ারে সর্বজনীন প্রদর্শন করা হয়েছে। একসময়ে কোহিনূর হীরাটি ১৭ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসনে শোভা পেতো।
ইরানের শাসক নাদির শাহ আক্রমণ করে ১৭৩৯ সালে ভারত থেকে এটি তিনি কেড়ে নিয়ে যান। ১৮৪৯ সালে পাঞ্জাব ব্রিটিশদের হাতে অধিগ্রহণের পর রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে হস্তান্তর করার আগে এটি অনেক হাত ঘোরে। ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানের মন্তব্যের পর ভারতের বিজেপি সরকার ক্ষুব্ধ।
ভিসা ফুরিয়ে যাওয়ার পরও যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়া ভারতীয়দের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তুলেছেন তিনি। এর পর ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক বেশ খারাপ হয়েছে। ভারত-ইউকে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) ভেস্তে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে বলেও জানা গেছে। এই অবস্থায় নতুন বিতর্ক তৈরী করলো কোহিনূর হীরা-খচিত মুকুট।