সরকার পুনরায় গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে চায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ অভিযোগ করা হয় বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়।
সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলায় বিএনপি নেত্রী ও সমাজকর্মী সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফোরকান হোসেন ইরানকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রাসেলকে র্যাব তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় বৈঠকে। বৈঠক নেতৃবৃন্দরা বলেন, সরকার পুনরায় গুম, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তারের মাধ্যমে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে চায়। অবিলম্বে গ্রেপ্তারদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
সম্প্রতি সরকারের সার্কুলারের মাধ্যমে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় ২৯টি বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈঠকে বলা হয়, ‘যখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এই কালো আইন বাতিলের জন্য দেশে এবং বিদেশে মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্বের গণমাধ্যমে বিরূপ সমালোচনা হচ্ছে, সেই সময়ে আরও ২৯টি বিভাগকে এই আইনের ১৫ ধারায় অন্তভুক্ত করায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ হরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের লাগামহীন দুর্নীতিকে আরও প্রসারিত করার সুযোগ সৃষ্টি করা হলো। অবিলম্বে এই সার্কুলার প্রত্যাহার ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানানো হয়।’
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ও রাজধানীসহ সারাদেশে অসহনীয় লোডশেডিং বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে বৈঠকে নেতৃবৃন্দরা বলেন, ‘সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও চরম অব্যবস্থাপনার কারনেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর ফলে একদিকে জন-জীবনে সৃষ্টি হয়েছে চরম অস্থিতকর পরিস্থিতি অন্যদিকে কৃষি, শিল্প ও পরিবহণ খাতে অস্থিতিশীলতা তৈরী হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এই বিপর্যয়ের ওপরে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত একটি প্রেস কনফারেন্স করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতায় নিন্দা করা হয় এবং অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি ও নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবিতে এবং চলমান আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শাহাদত বরণকারী ভোলার নূরে আলম, আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জের শাওন, মুন্সিগঞ্জের শহিদুল আলম শাওন হত্যা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের নিহত আজিমের হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবীতে চলমান গণ-আন্দোলনের ঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশ গুলোকে সফল করার জন্য বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সকল সারা দেশের সকল ইউনিটকে সর্বাত্মক উদ্যোগ ও অংশ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
গত ১০ অক্টোবর গাজীপুরে বিএনপির পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ শোক র্যালির ওপর পুলিশের অতর্কিত আক্রমণ, লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বৈঠকে বলা হয়, পুলিশের আক্রমণে প্রায় ২৫ জন গুরুতর আহত হয়। পুলিশ ১ জন নারীসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে।
অবিলম্বে গ্রেপ্তারদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় বৈঠকে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এসজেড