দালালের খপ্পরে পড়ে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান সেকশনের সময় চিকিৎসকের অবহেলায় সোমা (২৩) নামক এক গৃহবধু তিন মাস যাবৎ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। দারিদ্র পরিবার চিকিৎসার ব্যয় বহনের পাশাপাশি নবজাতকের দুধের চাহিদা মেটাতে চরম হিমসিম খাচ্ছে।
শুক্রবার সকালে কলারোয়া পৌর সদরের ঝিকরা গ্রামের বাসিন্দা বৈদ্য গোলদার ও চম্পা রাণী জানান,তার মেয়ে সোমা (২৩) গর্ভবতী ছিলেন। কলারোয়া সরকারি হাসপাতালে নিতেই দালাল চক্র খপ্পরে পড়ে হাসপাতালের সামনে হাফিজা ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানকার ক্লিনিক ম্যানেজার রনজিৎ পাল ও ডাঃ দিনেশ কুমার বলেন ‘আপনার মেয়ের যে অবস্থা সেজার করতে হবে।’ তাদের কথায় মেয়েকে ২৪ জুলাই ভর্তি করা হয় ওই ক্লিনিকে। সেখানে ১২ হাজার টাকা নেয় সিজার করতে এবং ওষুধ কিনতে লাগে আরো ১০হাজার টাকা। ২৯ জুলাই সোমাকে ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাড়ীতে এসে সোমার অবস্থা ক্রমাগত খুব খারাপ হয়ে পড়ে। পরে ফের সোমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওই হাফিজা ক্লিনিকে। সেখানে ক্লিনিক ম্যানেজার রনজিৎ পাল ও ডাঃ দিনেশ কুমার বলেন, তিন হাজার টাকা লাগবে সোমার পেট কেটে দেখতে হবে। তিন হাজার টাকা দেয়ার পরে পুনরায় সোমার পেট কাটেন। সেখানেও প্রায় ১২ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এর পরেও সোমার শরীরের কোন পরিবর্তন না হওয়ায় ক্লিনিক ম্যানেজার বলে ভাল চিকিৎসা করতে হলে সাতক্ষীরা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে ভাল চিকিৎসা না হওয়ায় অবশেষে সাতক্ষীরার বুশরা হাসপাতালে নিয়ে সোমাকে ভর্তি করা হলে সেখানকার কর্মরত চিকিৎসকরা সাথে সাথে সোমাকে অপারেশন করেন।
ডাক্তাররা জানান, সেজার করার সময় ভুল করে পায়খানার নাড়ী কেটে পেটের মধ্যে ফেলে রাখে। সে কারণে পেটের
মধ্যে ঘা হয়ে পচন ধরেছে। বর্তমানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাথরুম করানো হচ্ছে। ৩মাস পরে পেটের ঘা শুকালে তার পেটের সেলাই দেয়া হবে। এখানে প্রায় ৬০/৭০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
সোমার বাবা বৈদ্য গোদার জানায়, তাদের একটা কুঁড়েঘর ছিলো বেত্রাবতী নদীর পাড়ে খাস জমিতে। সেটি নদী খননের সময় ভেঙ্গে দিয়েছে। বর্তমানে ভাড়া বাসায় থাকেন। দিনে এনে, দিনে খাওয়া হয় তার। কোন মতে দিন চলে। মেয়ের চিকিৎসার খরচ কিভাবে মিটাবেন এটা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
সোমার মা চম্পা রানী জানায়, কলারোয়া সরকারী হাসপাতালে তারা যেতে দিলো না। জোর করে নিয়ে ভর্তি করালো হাফিজা
ক্লিনিকে। সেখানে ডাঃ আসিফ কায়সারকে দিয়ে তার মেয়েকে অপারেশন (সিজারিয়ান) করানো হয়। ভুল চিকিৎসায় তার মেয়ে মৃত্যুর পথযাত্রী। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে পারছেন না তারা। তার পরে তিন মাসের শিশুটির জন্য দুধও কিনতে পারছেন না। তিনি তার মেয়ের জীবন বাঁচাতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ডাঃ আসিফ কায়সার বলেন, আমি ওই ক্লিনিকে বিভিন্ন সময়ে অপারেশন করি। তবে কবে কোন রোগীর সমস্যা হয়েছে এটা আমার জানা নেই।
খুলনা গেজেট/ টি আই