ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা ও পরে পদদলিত হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৪ জনে। ম্যাচ শেষে সমর্থকেদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর পদদলিত হয়ে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া এই ঘটনায় আরও প্রায় ১৮০ জন আহত হয়েছেন। রোববার (২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভাতে আরেমা এফসি নামে একটি ফুটবল ক্লাব প্রতিদ্বন্দ্বী পার্সেবায়া সুরাবায়ার কাছে ২-৩ গোলে হেরে যাওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া সংঘর্ষ ও পদদলিত হয়ে আরও প্রায় ১৮০ জন আহত হয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা মন্ত্রী বলেছেন, স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার হলেও বিপুল আগ্রহের কারণে আরও প্রায় ৪ হাজার বেশি দর্শক ম্যাচের টিকিট কিনে মাঠে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এই ঘটনার পর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ এই লিগের সব ম্যাচ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো।
এ ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে চূড়ান্ত বাঁশি বাজানোর পরে ভক্তদের মাঠের দিকে দৌড়াতে দেখা যায়। পুলিশ তখন টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে, যার ফলে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত এবং শ্বাসরোধের ঘটনা ঘটে বলে পূর্ব জাভার পুলিশ প্রধান বলেছেন।
নিকো আফিন্তা বলেন, নিহতদের মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাঠে ব্যাপক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তারা (দাঙ্গাকারীরা) কর্মকর্তাদের ওপর হামলা শুরু করে এবং গাড়ির ক্ষতি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বোঝাতে চাই যে… তারা সবাই নৈরাজ্যকর ছিল না। দর্শকদের মধ্যে মাত্র ৩ হাজার লোক মাঠে প্রবেশ করেছিল। একপর্যায়ে পালানো ভক্তরা বের হওয়ার সময় একটি এক্সিট পয়েন্টে চলে যায়। তারপর সেখানে বড় ধরনের জটলা তৈরি হয় এবং অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে ফুটবল ভক্তদের পালানোর জন্য বেড়ার ওপর ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া পৃথক এক ভিডিওতে মেঝেতে প্রাণহীন মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা বলেছে, ম্যাচের সময় বা মাঠে ‘ভিড় নিয়ন্ত্রণ গ্যাস’ নিক্ষেপ করা বা ব্যবহার করা উচিত নয়। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএসএসআই) বলেছে, এই ঘটনায় তারা তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়া এই ঘটনাটি ‘ইন্দোনেশিয়ার ফুটবলের মুখকে কলঙ্কিত করেছে’ বলেও উল্লেখ করেছে তারা।
বিবিসি বলছে, ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল ম্যাচে সহিংসতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। এছাড়া শনিবারের ম্যাচের দুই দল আরেমা এফসি এবং পার্সেবায়া সুরাবায়া দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে পরিচিত। তবে সংঘর্ষের আশঙ্কায় পার্সেবায়া সুরাবায়ার ভক্তদের খেলার টিকিট কিনতে নিষেধ করা হয়েছিল।
কিন্তু মুখ্য নিরাপত্তা মন্ত্রী মাহফুদ এমডি ইনস্টাগ্রামে বলেন, কাঞ্জুরুহান স্টেডিয়ামে ম্যাচের জন্য ৪২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
এর আগে ১৯৬৪ সালে লিমাতে পেরু-আর্জেন্টিনা অলিম্পিক বাছাইপর্বের ম্যাচের সময় পদদলিত হওয়ার ঘটনায় মোট ৩২০ জন নিহত এবং এক হাজার মানুষেরও বেশি আহত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৮৫ সালে, বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে ৩৯ জন মারা যান এবং আরও ৬০০ জন আহত হন। সেসময় লিভারপুল (ইংল্যান্ড) এবং জুভেন্টাস (ইতালি) এর মধ্যে ইউরোপীয় কাপের ফাইনালের সময় একটি প্রাচীরের সাথে ফুটবল ভক্ত-দর্শকরা পিষ্ট হয়ে হতাহতের সেই ঘটনা ঘটে।