খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬
  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত

আজকের খুলনায় যারা চিরন্তন

শেখ দিদারুল আলম

যুগে যুগে কিছু মানুষের জন্ম হয় যারা দৈনন্দিন কাজের বাইরে থেকে রাজনীতিমুক্ত হয়ে সমাজের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে কিছু করার চেষ্টা করেন এবং বাস্তবে তা করেও যান। তাদের মধ্যে একজন খুলনার মরহুম সৈয়দ আলী হোসেন। যার পিতা মরহুম মীর রাহাত আলী খুলনার অন্যতম সমাজসেবক ছিলেন এবং অধুনালুপ্ত খুলনা পৌরসভার কয়েক বার নির্বাচিত কমিশনার (পূর্বে চেয়ারম্যান বলা হতো) ছিলেন।

সৈয়দ আলী হোসেন কর্মজীবনের যেমন সরকারি চাকরি করেছেন তেমনি এক পর্যায়ে সরকারি চাকরি বাদ দিয়ে ব্যবসায় যুক্ত হন। ১৯৪৮ – ১৯৪৯ সনে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন এবং এরপর থেকেই তার সাফল্য আসতে শুরু করে। যেদিকে তিনি হাত দিয়েছেন সেদিকেই সোনা ফলেছে। এ যেন তিনি আসলেন দেখলেন এবং জয় করেন এমন এক অবস্থা। পাশাপাশি খুলনা তথা বাংলাদেশের ক্রীড়া অঙ্গনের সাথেও তিনি নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। ছোটবেলায় একদিকে যেমন তিনি দাপটের সাথে ফুটবল খেলতেন, তেমনি অন্যদিকে ফুটবল খেলতে উৎসাহ দিতেন। তিনি মনে করতেন খেলাধুলার সাথে যুক্ত থাকলে শরীর গঠন যেমন সম্ভব, তেমনি অনেক অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকা যায়। আর এই খেলার প্রতি ভালোবাসা তাকে পরবর্তীতে ক্রীড়াজগতের সাথে যুক্ত করে। তিনি দীর্ঘদিন খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তেমনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বক্সিং ফেডারেশন এর সদস্য ছিলেন। তিনি খেলাধুলা উন্নয়নে অকাতরে বিভিন্ন ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করতেন।

ধার্মিক শেখ আলী হোসেন খুলনার বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। তাই তিনি বিভিন্ন স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন। তিনি খুলনার বর্তমান সরকারি এম এম সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠায় এম এ মজিদ এর সঙ্গে অবদান রাখেন। এই সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠায় প্রথমদিকে যে অর্থের সংস্থান করা হয় তার মধ্যে সৈয়দ আলী হোসেনের অবদান অন্যতম। তিনি খুলনা মডেল স্কুলের সেক্রেটারি ছিলেন এবং খুলনা বয়রায় অবস্থিত খুলনা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যেটি আজ খুলনা আর্ট স্কুল নামে পরিচিত।

তার সমাজসেবামূলক কাজের কারণেই তৎকালীন সরকার তাকে খুলনা পৌরসভা, খুলনা জেলা পরিষদ এবং কে ডি এ-র সদস্য মনোনীত করেন। তিনি প্রায় সব সময় একটি কথা বলতেন, জন্ম যখন হয়েছে মৃত্যু তখন হবেই, কিন্তু সমাজের জন্য যদি কিছু করে যেতে পারি এটি জীবনের সার্থকতা। তিনি তার সন্তানদেরকে এভাবেই নীতি ও নিষ্ঠার সাথে গড়ে তুলেছেন। তার সন্তান সৈয়দ জাহিদ হোসেন তাইতো তার পিতার মতো ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবক হিসেবে ইতিমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছেন। সৈয়দ আলী হোসেন ১৯১১ সালে খুলনার বয়রায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩২ সালে খুলনা জেলা স্কুল হতে প্রথম বিভাগে এস এস সি, এরপর খুলনা বিএল কলেজ থেকে ( সাবেক দৌলতপুর হিন্দু একাডেমী)১৯৩৪ ও ১৯৩৬ সনে প্রথম বিভাগে এইচ এস সি ও ডিগ্রী লাভ করেন। তখন এসএসসি, এইচএসসি ও ডিগ্রি পরীক্ষা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে অনুষ্ঠিত হতো।

প্রথম জীবনের সরকারি চাকরি করলেও পরবর্তীতে তিনি সেই চাকরি থে‌কে ইস্তেফা দিয়ে ১৯৪৮ – ১৯৪৯ সনে ঠিকাদারি শুরু করেন এবং ১৯৬২ সাল থেকে মোংলা বন্দরে ব্যবসার সাথে যুক্ত হন। এই সময় তিনি মংলা বন্দর তথা খুলনা উন্নয়নে জড়িত হয়ে পড়েন। কিন্তু এই সমাজসেবাকে কখনো রাজনীতিতে টানেনি। রাজনীতির বাইরে থেকেও যে সমাজ সেবা করা যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তিনি।

লেখক : খুলনা প্রতিনিধি, ইউএনবি ও যুগ্ম সম্পাদক, খুলনা গেজেট ।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!