মুন্সীগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত শাওনকে প্রাথমিক চিকিৎসায় ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
শুক্রবার শাওনের ছোট ভাই সোহান ভূঁইয়া দাবি করেছেন, বুধবার বিএনপির সমাবেশে পুলিশের গুলি খেয়ে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান শাওন। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ছাত্রলীগ এবং পুলিশের লোকজন তাকে চিকিৎসা করাতে দেয়নি।
এ সময় পরিবারের সদস্যরা শাওনকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলেও তাদের আটকে দেয়া হয়। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাওনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শাওনের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার সকালে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজলোর মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকায় শাওনের বাড়িতে এক শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ দেখা গেছে। এ এলাকার ছোয়াব আলীর বড় ছেলে শাওন পেশায় অটোরিকশাচালক হলেও রাজনীতিতে সক্রিয় ও যুবদলের কর্মী ছিলেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্বামীর মৃত্যুতে বাড়ির এক কোণে বসে অঝোরে কাঁদছেন শাওনের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার। আর কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা লিপি আক্তার।
আট মাসের সন্তান সাহাদকে কোলে নিয়ে সাদিয়া বলেন, ‘বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ি দুই জায়গায়ই থাকতাম। গত সোমবার আমাদের বাড়ি গিয়েছিল শাওন। বলেছিল- দু-এক দিন পরই আমাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসবে। এ জন্য বাজার-সদাই করবে। তাই কয়েক দিন মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যাবে। কিন্তু শাওন তো আমাকে নিতে এলো না। আমি আর আমার সন্তানই এখন চলে এলাম ওর বাড়িতে। আমি শাওন হত্যার বিচার চাই।’
মা লিপি আক্তার বলেন, ‘পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল শাওন। অল্প বয়সে আমার ছেলেটা বিয়ে করে। সংসারের হালও ধরে। বুধবার বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বলেছিল- ঘুরতে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। আমার ছেলে আর বাড়ি ফিরে এলো না। আমার ছেলেরে গুলি করে মাইরা ফেলল। আমার আট মাস বয়সী নাতি বাবাকে চেনার আগেই হারাল।’
প্রতিবেশীরা জানান, বিএনপির যেকোনো সভায় অংশ নিতেন শাওন। ২০২১ সালে ভালোবেসে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের সাদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিয়ের মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ, সাংবাদিক ও নেতা-কর্মীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন, জাহাঙ্গীরসহ তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে শাওনের মৃত্যু হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই