শুধু একটি জয় পাল্টে দিয়েছে পরিস্থিতি। যাদের খোঁজ কেউ রাখতো না তারাও এখন ফুল নিয়ে হাজির হচ্ছেন বাড়িতে। ঘর উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করে যাওয়ার পর কেউ পাশে না দাড়ালেও রাতারাতি মুছে ফেলা হচ্ছে সেই ক্রস চিহ্ন। ঘর তৈরি করে দেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাড়ি যাওয়ার কোন পথ না থাকলেও এখন সেখানে রাস্তা নির্মাণের আয়োজন চলছে। এসবই সাফ চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের ঘিরে।
গণমাধ্যমে খবর এসেছে, নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের সদস্য আঁখি খাতুনের বাবার সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে সিরাজগঞ্জে দুই পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে শাসানো ও হুমকির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দু’জনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (শাহজাদপুর সার্কেল) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
এদিকে সাতক্ষীরায় প্রমিলা ফুটবলার মাসুরা পারভীনের বাড়ির আঙিনায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেওয়া লাল রঙের (ক্রস চিহ্ন) মুছে ফেলা হয়েছে। সদর উপজেলার ১৩ নং লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল আলিম এ চিহ্ন মুছে ফেলেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা’র উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ দিকে সওজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া এই লাল ক্রস চিহ্ন মুছে ফেলা হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, যতদিন না পর্যন্ত মাসুরা পারভীনের পরিবার নিজেদের বাড়ি বাংলাদেশ সড়ক বিভাগের নির্ধারিত জায়গা থেকে সরিয়ে নতুন বাড়ি করবেন ততদিন পর্যন্ত তাদের (সওজ) কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ করা গেলো।
সাফ জয়ের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও দলের ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনকে গণসংবর্ধনা দিবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাবিনা ও মাসুরাকে সংবর্ধনার বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুুতি ও পরিকল্পনা সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয় হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, সাফ জয়ী সাতক্ষীরার দুই কৃতি খেলোয়াড় সাবিনা ও মাসুরা এখন ঢাকায় আছে। ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় ফিরলেই দুই কৃতি ফুটবলারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে।
আরেক সদস্য রুপনার বাড়ি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার দুর্গম ভূইয়াদম এলাকায়। তাঁর বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি মোটেই সহজ নয়। প্রধান সড়ক শেষে প্রায় আধাঘন্টার হাঁটা পথ। সেই হাঁটা পথের শেষে ভাঙা নড়বড়ে এক সেতু। যে সেতু ভেঙে পড়তে পারে যে কোন সময়। মঙ্গলবার দুপুরটা রুপনাদের বাড়ির উঠোন যেন হয়ে উঠেছিল এক আনন্দ নিকেতন। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান সদলবলে হাজির হয়েছিলেন রুপনাদের বাড়িতে। সাথে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সাবেক ফুটবলার, মহিলা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা।
জেলা প্রশাসক ফুল, মিষ্টি ও দেড় লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন রুপনা চাকমার মা কালাসোনা চাকমার হাতে। ফুল হাতে নিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। আবেগে আপ্লুত হন জেলা প্রশাসকও। রুপনারে জরাজীর্ণ ঘরটি দেখে নতুন ঘর নির্মাণের আশ্বাসসহ তাঁর বাড়িতে যাওয়ার সেতুটি নির্মাণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান তিনি।
দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়কে পুরস্কারের অর্থ প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
পুরস্কারের অর্থ ছাড়াও যেসব খেলোয়াড়দের ঘরের প্রয়োজন, তাদের ঘর দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া অন্য খেলোয়াড়দের কি অবস্থা সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বুধবার সাফ জয়ী নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমার ঘর নির্মাণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
অভিনেত্রী জয় আহসান জানিয়েছেন, বাংলার মেয়েদের এ সাফল্য আমাদের জন্য বিরাট অর্জন। ওরা এখনো অনেক ছোট তাই হয়তো বুঝে উঠছে পারছে না যে ওরা দেশের জন্য কত বড় কাজ করেছে।
নারী ফুটবলার চরিত্র নিয়ে সিনেমা বানানো কিংবা অভিনয় করার ইচ্ছে আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘আমার ধারণা এরকম তো হবেই। সিনেমা হবে। আমাদের পরিকল্পনাতেও এমন কাজ ছিলো। সেটা নিশ্চয় আরও তাড়াতাড়ি হবে।’
সাফ জয়ের মুকুট নিয়ে দেশে ফেরার পর সানজিদা-সাবিনারা নানান মাধ্যমে থেকে পাচ্ছেন পুরস্কারের ঘোষণা। এত সুখবরের মাঝে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছ থেকেও বেতন বাড়ার আশ্বাস পেয়েছেন সাবিনা খাতুনরা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সাবিনাদের সম্মানজনক বেতন দেওয়া আশা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেছেন, ‘আসলে টাকার অঙ্কটা কেমন হবে তা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে সম্মানজনক একটি অবস্থানে নেওয়া হবে বলা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে অধিনায়ক বলেন, ‘আজ আমরা সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরা আমাদের চাওয়া পাওয়াগুলো জানিয়েছি। তিনি তা পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আমাদের বেতন বাড়ানোর কথা বলেছি। তিনি (সালাউদ্দিন) মেনে নিয়েছেন। শিগগিরই বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।’
চলতি বেতন কাঠামো অনুযায়ী, তিনটি শ্রেণিতে বাংলাদেশের ৩৬ জন নারী ফুটবলার বেতন পাচ্ছেন। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাবিনারা পাচ্ছেন মাত্র ১২ হাজার টাকা।
খুলনা গেজেট/ টি আই