চলতি ভরা মৌসুমেও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে মাছের রাজা ইলিশ। খুলনার পাইকারী ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১ জুলাই থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও চাহিদার তুলনায় মাছের সরবরাহ কম থাকাতে এখন প্রতিটি পাইকারি ও খুচরা বাজারে ইলিশের চড়া।
পহেলা জুলাই থেকে আজ অব্দি আড়াই মাস ইলিশ ধরা শুরু হলেও বাজারে ইলিশের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। অনেকেই বাজারে যাচ্ছেন কিন্তু ইলিশ না কিনে ফিরছেন।
খুলনার গল্লামারি বাজার, সন্ধ্যা বাজার, নিউমার্কেট বাজার, রুপসা বাজার, নতুন বাজার, বয়রা বাজার, খালিশপুর বাজার সহ সকল বাজারে ইলিশের দাম চড়া।
নগরীর গল্লামারি বাজারের খুচরা বিক্রেতা আফজাল জানায়, বাজারে ইলিশ দেখলেই ক্রেতারা হুমরি খেয়ে পরে কিন্তু দাম শোনার পর কেউ আর মাছ কিনতে চায় না। গত ৮-১০ দিন ধরে বড় ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে না। এগুলো বড় মাছ কোম্পানি ফ্রিজজাত করছে। খুলনা সন্ধ্যা বাজারে গিয়ে দেখা যায় এক কেজি ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা, ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুলনায় পাইকারি ইলিশের উল্লেখযোগ্য দুটি ব্যবসা কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে একটি হল খুলনার ৫ নং ঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতাধীন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং আরেকটি রূপসা মাছ বাজার। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রায় ৬ দশক ধরে পাইকারি মৎস্য বিক্রয় করছেন শেখ সাইদুল ইসলাম। পিতা শেখ আইয়ুব আলীর হাত ধরে ৯০ দশক থেকে তিনি ইলিশ মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত। ১৯৫৯ সাল থেকে তার বাবা এই ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ছাড়াও এখন কেন্দ্রে ৫ থেকে ৬ জন মৎস্য ব্যবসায়ী (মহাজন) রয়েছেন। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান দক্ষিণ বাংলার বরিশাল, বরগুনা, ভোলা এবং সমুদ্র থেকে এখানে ট্রলারে করে ইলিশ মাছ আসে। যা সকাল দশটার মধ্যে খুচরা বিক্রেতারা ক্রয় করে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হউয়ায় এখন ট্রাক ও পিকআপ যোগে ইলিশ মাছ নিয়ে আসে জেলেরা। আগে মহাজনরা মাছ বিক্রি করে ৫% কমিশন পেত, এখন সেটি ৩% এ নেমেছে। তিনি জানান, জেলেদের মাছ বাবদ নগদ অর্থ পরিশোধ করা হয়। দাদন নয়, সহযোগী অর্থে বিনিয়োগ করা হয়। শেখ সাইদুল ইসলাম জানান গত বছর তিনি ৮ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করলেও তেমন মুনাফা অর্জন করতে পারেননি।
রূপসা মাছ বাজারের ব্যবসায়ী ইসাক মেম্বার জানান, ইলিশ মাছের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ের সাথে খুলনা জেলার ছোট-বড় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। তাই এই ব্যবসা উন্নয়নের দিকে সকলকে নজর দেওয়া উচিত।
এখন খুলনার পাইকারি মাছ বাজারের দেড় কেজি ইলিশ প্রতি মন ( ৫৫,০০০ – ৫৭,০০০ ) টাকা, ১ কেজি ইলিশ প্রতি মন ( ৫০,০০০ – ৫২,০০০ ) টাকা, ৮০০ – ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মন ( ৪৩,০০০ – ৪৪,০০০ ) টাকা এবং ৫০০ – ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মন ( ৩২,০০০ – ৩৩,০০০ ) টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফলে বড় ইলিশ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ভাগ্যে জুটছে না।
এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪৯ টি প্রতিষ্ঠানকে ২,৪০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুলনা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীতে ১ কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে যা ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
উল্লেখ করা যায়, গত ১ নভেম্বর ২০২১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ঈলিশ ধরা বন্ধ ছিল। ১ জুলাই থেকে মাছ ধরা শুরু হলেও গত বছরের তুলনায় এবারের উৎপাদন কম। সম্ভবত আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে অক্টোবরের শেষ দিন পর্যন্ত মা ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
এদিকে গত কয়েকদিন যাবত বৈরী আবহাওয়া থাকার কারণে জেলেরা ইলিশ ধরার ট্রলার নিয়ে সমুদ্র যেতে না পারায় তারা কষ্টে জীবন যাপন করছেন।
খুলনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, এবার ইলিশের দাম বেশি হওয়ার কারণে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, আশারূপ মাছ না পাওয়া এবং একশ্রেণীর ধনী মানুষ নিম্নবিত্তের দিকে না তাকিয়ে ফ্রিজে ইলিশ কিনে ভর্তি করে রাখা।
ব্যবসায়ী শেখ সাইদুল ইসলাম জানান, বর্তমান সরকারের বহুমুখী পরিকল্পনার ফলে দেশে ইলিশ উৎপাদন পূর্বের তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম ওঠানামা করতে পারে, তবে সরকারের নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখা একটি যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত। আশা করা যায় ইলিশের সুদিন আবার ফিরে আসবে।