ফর্ম আর বয়সের কারণে না হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাদ পড়েছেন, তাহলে নাজমুল হোসেন শান্ত কোন কারণে বিশ্বকাপ দলে? প্রবল কৌতূহল থাকলেও তা চেপে নিন। কেননা, তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
উত্তর দিতে গিয়ে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ঘরোয়া ক্রিকেটে শান্তর অতীত রেকর্ড আর পারফরম্যান্সের কথা সামনে এনেছেন। ‘শান্তর বিপিএল রেকর্ডটা দেখেন। আমাদের ঘরোয়া যে কয়জন ক্রিকেটার আছে, তাদের মধ্যে ওর রেকর্ড খারাপ নয়। বিপিএলে যে কয়টা সেঞ্চুরি আছে লোকাল খেলোয়াড়দের, বেশি কিন্তু শান্তরই।’ পাশ থেকে হাবিবুল বাশারের সমর্থন। ‘ওর দুটি বিপিএল সেঞ্চুরি আছে।’
দলে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি সাজাতে গিয়ে পুরোনো দুটি সেঞ্চুরি সামনে এনেছেন নির্বাচকপ্রধান। অথচ শেষবারের বিপিএলে শান্ত কিছুই করতে পারেননি। বরিশালের হয়ে ৯১.৭০ স্ট্রাইকরেটে ১১ ম্যাচে ১৮৮ রান করে তালিকার ১৮ নম্বরে নাম লিখিয়েছিলেন। তবে হ্যাঁ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের টি২০ ফরম্যাটে আবাহনীর হয়ে মোটামুটি ভালো করেছিলেন। ১২৬.৮৯ স্ট্রাইকরেটে ১৬ ম্যাচে ৩৬৮ রান করে তালিকার ছয় নম্বরে ছিলেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে এই মারদাঙ্গা পারফরম্যান্স করেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে কিন্তু বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। সুযোগ কম পেয়েছেন- এই অনুযোগ বোধহয় শান্ত নিজেও করবেন না। কেননা, নেই নেই করেও ৯টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলেছেন। ওপেন করেছেন প্রতিটি ম্যাচে। ইমপেক্ট বলতে একটি মাত্র ছক্কা! ৯ ম্যাচে যে ওপেনারের স্ট্রাইকরেট ১০৪.২২, গড় যার ১৮.৫০, সে কি করে বিশ্বকাপ দলে?
সামাজিক মাধ্যমের দেয়াল লিখনে এই প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি নির্বাচকরা। কোচের ভূমিকায় দলের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শ্রীধরন শ্রীরাম অবশ্য একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাও খুব বেশি জোরালো নয়। ‘আমি যেটা খুঁজছি, সেটা হলো ইমপ্যাক্ট। আমি এখানে পারফরম্যান্স খুঁজছি না। আমি মনে করি শান্ত অনেক ভালো খেলোয়াড়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রয়োজনীয় টেম্পারমেন্ট ওর আছে। অল্পবিস্তর যা দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে বাউন্সি উইকেটে খেলার মতো সামর্থ্য ওর রয়েছে, ওর মধ্যে হরিজেন্টাল শট খেলার সক্ষমতা রয়েছে। যে ইমপ্যাক্ট খুঁজছি, তা ওর মধ্যে রয়েছে।’
সেই ‘ইমপ্যাক্ট’ বলতে কী বুঝিয়েছেন, সেটিরও একটা ‘অদ্ভুত’ ব্যাখ্যা দিয়েছেন শ্রীরাম, ‘অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে মাঝেমধ্যে নতুন বলে প্রথম দুই ওভার খেলে দেওয়াটাও ইমপ্যাক্ট। যদি (ওই সময়ে) আমরা ১৫ রানে উইকেট না হারাই, তাহলে আপনি পাওয়ারপ্লেতে ভালো শুরু পেলেন। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ‘আর্লি সামার’-এ কন্ডিশন চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।’
শ্রীরামের কথা শুনে মনে পড়ে যায় এশিয়া কাপ শুরুর আগে দুবাইয়ে ওপেনার নাঈম শেখকে নিয়েও তিনি বলেছিলেন, ‘নাঈম ন্যাচারাল স্ট্রোকমেকার।’ নাঈম যদি হয় ন্যাচারাল স্ট্রোকমেকার, তাহলে নাজমুল হোসেন শান্তকে ‘ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার’ হিসেবে মেনে নিতে সমস্যা কোথায়?