খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভারতের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির ভিত্তিতে সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে : চিফ প্রসিকিউটর
  জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩ জনের শুনানি চলছে
  শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার তদন্ত শেষ করা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তায় একমত, ৭ সমঝোতায় সই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে ভারতের সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে মঙ্গলবার দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার ও প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক শেষে প্রেস বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।

যৌথ বিবৃতির আগে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং আমাদের দুই দেশ এবং আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে একমত হয়েছি।’

বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘প্রতিবেশী কূটনীতির’ রোল মডেল বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যৌথ বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারত বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় দুই দেশ অনেকগুলো অমীমাংসিত ইস্যু সমাধান করেছে।’

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য সব অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিকটতম প্রতিবেশী।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারত্ব তৈরির মাধ্যমে দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘যদি বাংলাদেশ এবং ভারত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তবে তা শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ৫৪টি অভিন্ন নদী এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তবেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ তাদের জনগণের সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর।

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে সারা বছরব্যাপী আয়োজিত ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর সফল সমাপ্তির জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে আরেকটি ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই বৈঠকের ফলাফল দুই দেশের জনগণকে উপকৃত করবে।

তিনি বলেন, ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার চেতনা নিয়ে আমরা বৈঠকটি করেছি। সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো আরও সামনে এগিয়ে নিতে বৈঠকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’

পারস্পরিক স্বার্থে দুই দেশের মধ্যকার প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন এবং পারস্পরিক অগ্রাধিকারগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘কানেকটিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমান্ত এবং ঋণ সুবিধার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের অমূল্য ত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস, সংস্কৃতি, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং অব্যাহত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।’

নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গতি প্রদান করেছে।’

এদিকে ভারতের সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে শুরুতে একান্ত এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক শেষে এসব এমওইউ সই হয়।

৭ এমওইউ

১. সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে কুশিয়ার নদী থেকে বাংলাদেশ কর্তৃক ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার বিষয়ে এমওইউ। বাংলাদেশের পক্ষে এতে সই করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। ভারতের পক্ষে সই করেন জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের পানিসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা পুনরুজ্জীবন বিভাগের সচিব পঙ্কজ কুমার।

২. বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সিএসআইআর) সঙ্গে বাংলাদেশের সিএসআইআরের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ। অন্যদিকে ভারতের পক্ষে সই করেন সিএসআইআরের মহাপরিচালক ড. এন. কালাইসেলভি।

৩. বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের ভোপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রাব্বানি এবং ভারতের পক্ষে বিচারপতি এ.পি. সাহি সই করেন।

৪. ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং ভারতের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার রেলওয়ে বোর্ডের মুখ্য নির্বাহী পরিচালক ভি জি ভুমা সই করেন।

৫. বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয় আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং ভারতের পক্ষে দেশটির রেলওয়ে বোর্ডের ইডিটি (ট্রাফিক) দীপক কুমার ঝা সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

৬. ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘প্রসার ভারতীর’ সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ টেলিভিশন। এমওইউতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন এবং ভারতের প্রসার ভারতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মায়াঙ্ক কুমার আগারওয়াল।

৭. মহাশূন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতাবিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বিটিসিএল এবং এনএসআইএল। সমঝোতা স্মারকটিতে সই করেন বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং ভারতের পক্ষে এনএসআইএল চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রাধাকৃষ্ণাণ।

এর আগে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার পর হায়দরাবাদ হাউসে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভ্যর্থনা জানান।

ফটোসেশনে অংশগ্রহণের পর দুই প্রধানমন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। একান্ত বৈঠকের পর দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

সফরসূচি অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।

বিকেলে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে উপরাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার নয়াদিল্লিতে যান প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন শেখ হাসিনা।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!