খুলনার ডুমুরিয়ায় এই প্রথম অত্যাধুনিক অটো মেশিনে তৈরি হচ্ছে ইটের বিকল্প পরিবেশ বান্ধব কংক্রিট ব্লক। পোড়া মাটির ইটভাটার কারণে কৃষিজমি ও পরিবেশের নানামুখি ক্ষতি হচ্ছে। এসবদিক বিবেচনা করে সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ রানাই এলাকায় ‘মা কংক্রিট এন্ড ব্লক ফ্যাক্টরী’ নামে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার ব্লক ইট উৎপাদন হচ্ছে এ কারখানাতে।
জানা যায়, ইট নির্মাণ হয় ফসলি জমির উর্বর মাটি দিয়ে। ইট পোড়ানো প্রধান সামগ্রী কাঠ আর কয়লা। এতে ক্রমন্বয় হ্রাস পাচ্ছে অক্সিজেন উৎপাদক গাছ। আর ভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোয়ায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। এতে বাংলাদেশ প্রতিবছর শতকরা একভাগ কৃষিজমি হারাচ্ছে। যার দ্বিতীয় প্রধান কারণ ইটের কাঁচামাল ও ইটের ভাটা। এসবকারণে সরকার পরিবেশবান্ধক কংক্রিট বøকের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ২০২৫ সালের পর সরকারি কোন কাজে পোড়া মাটির ইট ব্যবহার থাকছে না।
ডুমুরিয়া একটি কৃষি প্রধান উপজেলা। এখনকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। এ উপজেলাতে ২২টি ইটভাটা রয়েছে। অধিকাংশ ভাটাগুলোতে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। এসবদিক বিবেচনা করে এমপি নারায়ন চন্দ্র চন্দ উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নে রানাই গ্রামে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন। বর্তমানে ফ্যাক্টরিতে ২৪ জন শ্রমিক কাজ করছেন। উন্নতমানের হাইড্রোলিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে ব্লক। তৈরি সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সিমেন্ট, বালু ও ৪ মিমি পাথরের কণা। হলো, সলিড, ইউনিপেভারসহ পাঁচ ধরনের ব্লক তৈরি হচ্ছে। এরমধ্যে সবার নজর কাড়ছে হলো ব্লক। হলো ব্লকের ওজন কম, এর আকার আকৃতিও ভালো। ফলে অধিকতর ভূমিকম্পসহনীয় এবং গাঁথুনি ও প্লাস্টারের খরচ কম। এর ভিতরে ফাঁকা থাকার ফলে গরম ও শীতে ঘর আরামদায়ক ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হয়। ব্লকের ওজন কম ও সাইজে বড় হওয়ায় কম জনবল দিয়ে অতি দ্রুত সময়ে কাজ করা যায়। লবণাক্ততা না থাকার কারণে দেয়ালের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নেই বললেই চলে।
ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার রঞ্জন জোর্দ্দার বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কংক্রিট ব্লক তৈরি কার্যক্রম শুরু হয়। সঠিকভাবে এবং মানসম্মত কাঁচামাল দিয়ে ব্লক তৈরি হচ্ছে। কমপক্ষে ১৫ দিন কিউরিন করে তা বাজারজাত করি। সলিড ব্লক ১৩ টাকা, টু-হলো ব্লক ১৪ টাকা, এইট-হলো ব্লক ৪৮ টাকা ধরে বিক্রি করছি। একটা এইট-হলো ব্লক ৪টি ইটের সমান। আর রাস্তার নির্মাণের জন্য ইনিপেভার ৬০ এমএম ১৮ টাকা ও ৮০ এমএম ২৪ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সরকারের পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের যে পরিকল্পনা রয়েছে তাতে আগামী ২০২৫ সালের পর সরকারি কোন কাজে পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার থাকছেনা। টেকসই উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে ইটের বিকল্প হিসেবে ইউনি ব্লক দিয়ে উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন সরকার। তিনি বলেন, রাস্তা নির্মাণে ৩৫ এমপিএ শক্তি ধরা থাকে। ডুমুরিয়ার ‘মা কংক্রিট ব্লক ফ্যাক্টরী’র ইউনি ব্লকে এলজিইডি’র ল্যাবরেটরি টেস্টে ৩৫ থেকে ৪০ এমপিএ শক্তি পাওয়া গেছে। আগামীতে সড়কে এ ইউনি ব্লক দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই