খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেলে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে Contemporary Gender Underpinnings and Frameworks: Bangladesh Perspective (কনটেমপোরারি জেন্ডার আন্ডারপিনিংস এন্ড ফ্রেমওয়ার্কস: বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ) শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সাম্যতে আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মুক্তিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের সমান অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে রাজনীতি, কর্মস্থল, সামাজিক কর্মকাণ্ড সবকিছুতেই নারীরা দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন কার্যকর করার বিষয়টি এসেছে নেতৃত্ব থেকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীদের রাজনীতিতে এনেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা নারীদের পাশে ছিলেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আবারও নারীদেরকে পিছিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে নারীদের ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের কার্যকর ভূমিকায় নারীর ক্ষমতায়নে দেশ অনেক এগিয়েছে। দেশে এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়েছে।
উপ-উপাচার্য বলেন, ইসলাম ধর্মে নারীদের সম্মান অনেক উঁচুতে। কিন্তু বিভিন্ন অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীদের পিছিয়ে রাখা হয়। নারীরা সবসময়ই নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। শিক্ষিত সমাজেও নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। শুধু শারীরিক নয়, মানসিক দিক থেকেও নারীদের নির্যাতন করা হয়। সময়ের সাথে এখন নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে। এক্ষেত্রে পরিবার থেকেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত। আমরা যদি পরিবার থেকে নারীদের যথাযথ সম্মান দেই, ছেলে-পুরুষদেরকে নারীদের সম্মান দিতে শেখাই তবেই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গাতেই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সেমিনারে রিসোর্স পার্সন হিসেবে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম। তিনি নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন দিকের অবস্থা ও অবস্থান, বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে নানা প্রতিবন্ধকতা উত্তরণে দিকনির্দেশনা ও করণীয় সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, নারীদের মধ্যে বিভেদ আছে। শিক্ষা, অর্থ, সৌন্দর্য্য, শ্রেণি সবকিছু মিলিয়ে সব নারী কখনও এক নয়। নারীরা পারে না, এটা বলা হাস্যকর। কেননা নারীরা চাইলে যেকোনো কাজেই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের চিন্তাধারা কোনও কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হলে চলবে না। তাদেরকে মুক্তচিন্তার হতে হবে। মনের ঘরের দরজা, জানালা খুলে রাখতে হবে। রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি সবকিছু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করতে হবে।
রিসোর্স পার্সন বলেন, নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। নারীদের আত্মরক্ষায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধি দেন। তাদের ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নারীর ক্ষমতায়নে বেশ তৎপর। তিনি জাতীয় সংসদে ৩৩ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন। একইসাথে তিনি নারীদের ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারীদের স্বতন্ত্র কোটা ব্যবস্থা সংরক্ষিত রেখেছেন। রাজনীতি, কর্মস্থল সবখানেই নারীকে উচ্চপদে অধীষ্ঠ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। যার ফলে অনেক বড় বড় পদে আমরা নারীদের দেখতে পাচ্ছি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি নির্বাচনে নারীদের ক্ষমতায়নে মনোনয়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে সমতা বিধানে আসন বণ্টনে বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, নারীদের সতর্কভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। যাতে কোনও ধরনের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার তারা না হন। বাংলাদেশের চমৎকার সংবিধানে নারীদের অধিকার সম্পর্কে অনেক দিক রয়েছে, আইন রয়েছে, দিকনির্দেশনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রত্যেকের এই সংবিধান পড়া এবং তাদের কাছে থাকা উচিত বলে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি সময়োপযোগী এতো সুন্দর একটি সেমিনার আয়োজনের জন্য সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের সভাপতিত্বে সেমিনার সূচনা বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার। সঞ্চালনা করেন প্রফেসর ড. তুহিন রায়। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এমএনএস