জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চৌগাছার হোটেল রেস্তোরাগুলোতে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হোটেলের বেচাকেনায় এক প্রকার ধস নেমেছে। দিন কিংবা রাত কোনো সময়ই কাঙ্খিত ক্রেতা মিলছেনা হোটেলে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে কর্মচারী ছাঁটাই করে যেনতেন ভাবে ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন হোটেল মালিকরা।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে টালমাটাল অবস্থা যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছায়। সর্বত্রই চলছে এক ধরনের হাহাকার। চালের দাম পাগলা ঘোড়ার মত ছুটতে শুরু করেছে, কোনোভাবেই এর লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিটি দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। আর এর প্রভাব পড়েছে চৌগাছা বাজারের সকল হোটেল রেঁস্তোরাগুলোতে। হোটেল মালিকদের দাবি বাজারে পণ্য সামগ্রীর যে ভাবে দাম বেড়েছে, সেভাবে খাবারের দাম কিন্তু বৃদ্ধি হয়নি, তারপরও ক্রেতার দেখা মিলছেনা। বর্তমানে বেচাকেনা বহুলাংশে কমে গেছে, যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই এখন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
আজ বুধবার চৌগাছার বেশ কিছু খাবার হোটেল ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ হোটেল ক্রেতা শূন্য, ভর দুপুরেও ভাত খাওয়ার খরিদ্দারের দেখা মিলছে না।
কোনো কোনো হোটেলে দু’একজন ক্রেতার দেখা গেলেও সারাদিনই এমনকি রাতেও সেভাবে মিলছেনা ক্রেতা। এই অবস্থা চলছে গত এক সপ্তাহ ধরে বললেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।
চৌগাছা বাজারের সেরা হোটেলের মধ্যে একটি চৌগাছা হোটেল। বুধবার দুপুর আড়াইটার সময় এই হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি খাবার খাচ্ছেন বাকি চেয়ার টেবিল পড়েই আছে। হোটেল মালিক মামুনুর রহমান মানুন বলেন, চরম খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। বাজারে যে ভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে সেভাবে কিন্তু খাবারের দাম না বাড়ালেও মানুষের কেনার সামর্থ্য না থাকায় ক্রেতা কম হচ্ছে।তিনি জানান, বর্তমানে ১পিস খাশির মাংস ১৫০ টাকা, ১ প্লেট ভাত ২০ টাকা, ১পিস মাছ ৯০ টাকা, সবজি ১৫ টাকা আর ভর্তা হচ্ছে ১০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে, এতেও কর্মচারী বেতন, ঘরভাড়া বিদ্যুৎ বিল দিয়ে খরচ ওঠা কষ্টকর। এর পর আবার ক্রেতা কম।এখন দুপুর আড়াইটা এই সময়ে হোটেলে মানুষের সিরিয়াল পড়ে যেত অথচ এখন টেবিল খালি পড়ে আছে। মানুষের কাছে টাকা নেই তাই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তার ধারণা বলেই তিনি জানান।
রহমত হোটেলের মালিক রহমত আলী বলেন, মাছ, ভাত, মাংসের পাশাপাশি রুটি বিক্রির জন্যে এই হোটেল চৌগাছা ছাড়াও অন্য সব এলাকাতে পরিচিত। গত এক সপ্তাহ বেচাকেনা নেই বললে চলে। সারা দিন ভাত রুটি দুটোই বিক্রি করি আর সন্ধ্যার পর হতে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে শুধু রুটি বিক্রি কিন্তু কয়েক দিন ধরে সন্ধ্যার পর ক্রেতাই আসছে না। ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী ও বাবুর্চি বেতনসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। এই অবস্থায় বাপের রেখে যাওয়া ব্যবসা কিভাবে আগলে রাখবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারির মালিক বাপন কুমার ঘোষ বলেন, সব কিছুর দাম বেড়েছে, তাই বাধ্য হয়ে তারাও মিষ্টি দইসহ সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছেন। এতে করে ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। দিনে যেভাবে ক্রেতা আসতো এখন তার অর্ধেকও আসেনা। যারা আসছে তাদের সাথে দাম নিয়ে বিবাদ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ১ কেজি দই ১৪০ টাকা, চমচম ১৬০ টাকা, কালোজাম ১৬০ টাকা, সন্দেশ ৩৬০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে তিনি জানান।
পৌর সদরের বাসিন্দা দলিল লেখক বাবলুর রহমান বলেন, প্রতিদনি সকালে বাজারে গিয়ে রুটি সবজি নাস্তা করতেন, এখন বন্ধ করেছেন। হোটেলের খাবারের দাম তো বেড়েছে, তাই টাকা হোটেলে ব্যয় না করে পরিবারে ব্যয় করছেন। তিনি বলেন, আগে দলিল রেজ্রিস্ট্রি হলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় হোটেলে খেতেন। কিন্তু জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়াতে ওই আত্মীয়তা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই