তীব্র গরমে হাসফাস করছে জনজীবন। তারপর চলছে লোডশেডিং। একটু ছায়া কিংবা বাতাস পেতে ব্যাকুল সব শ্রেণির মানুষ। গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ ভিড় করছেন চার্জার ফ্যানের দোকানে। আর সেই সুযোগটি লুফে নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা চার্জার ফ্যানের সংকট দেখিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে। প্রতিটি ফ্যানের মূল্য কোথাও দ্বিগুণ আবার তিনগুণ রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
প্রকৃতির নিয়মে এখন শ্রাবণ মাস। স্বাভাবিক নিয়মে এখন বৃষ্টির সময়। কিন্তু কোথাও বৃষ্টি নেই। তীব্র দাবদাহের কারণে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে চলছে দিনে রাতে সমান তালে লোডশেডিং। পরিবার ছোট সদস্য ও বড়রা নিজেদের গরমের হাত রক্ষা পাওয়ার জন্য চার্জার ফ্যানের দোকানে ভিড় করছে। চার্জার ফ্যানের বিক্রিরও ধুম পড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা মতো তা সরবরাহ করতে দোকানিরা হিমশিম খাচ্ছে। ফুরিয়ে গেছে অনেক দোকানে থাকা চার্জার ফ্যানের স্টক। এ সুযোগে ব্যবসায়ীর ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশী দামে বিক্রি করছে ফ্যান।
নগরীর হার্ডমেটাল গ্যালারী, ডাকবাংলা মোড় ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বেড়েছে চার্জার ফ্যানের। চাহিদা অনুযায়ি ফ্যান না থাকায় ব্যবসায়ীরা যে যার মতো দাম রেখে বিক্রি করছে ফ্যান।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেটের ব্যবসায়ী খায়রুল বাসার খুলনা গেজেটকে বলেন, গরমের শুরু থেকে চার্জার ফ্যানের চাহিদা একটু বেড়েছে। সপ্তাহ ধরে ক্রেতারা চার্জার ফ্যানের জন্য দোকানে ভিঢ় করছে। সরবরাহ কমে গেছে। চার্জার ফ্যানের সংকট দেখা দিয়েছে। যা আছে তা খুব দামী।
একই মার্কেটের অপর ব্যবসায়ী বলেন, চার্জার ফ্যান মূলত আসে চীন থেকে। আমদানিকারকদের সংকটের কথা জানালে উত্তরে বলেন, শুল্কের হার বেড়েছে। বেড়েছে ডলারের দাম। বেড়েছে পরিবহন খরচ। ফ্যানের চাহিদার কথা বললে তারা নির্ধারিত দাম থেকে আরও পাঁচশ’ বা এক হাজার টাকা বাড়িয়ে বলে। সর্বশেষ লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। ক্রেতারা ফ্যান কিনছেন তাদের সাধ্য অনুযায়ী।
ডাকবাংলা মোড়ের ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ খুলনা গেজেটকে বলেন, ১২ বছর আগে দেশে লোডশেডিং হত। মাঝে কমে গিয়েছিল। সে সময়ে চার্জার ফ্যানের চাহিদা এমন ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে লোডশেডিং ও গরমের কারণে চাহিদা বেড়েছে। দোকনে ফ্যান নেই। পাঁচশ’ টাকার চার্জার ফ্যান এক হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যেহেতু তাকে বেশী দাম দিয়ে কিনে এ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
হার্ডমেটাল গ্যালারীর ব্যাবসায়ী ফিরোজ খুলনা গেজেটকে বলেন, চার্জার ফ্যানের দাম অস্বাভাবিক আকারে বেড়েছে। ঢাকায় অর্ডার দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। ৩৫শ’ টাকার ফ্যান ৬ হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
ক্রেতা গাজী এলিমুর রহমান খালিশপুর এলাকা থেকে হার্ডমেটাল গ্যালারীতে এসেছিলেন চার্জার ফ্যান কিনতে। দাম শুনে তিনি হতবাক। কয়েকটি দোকান ঘুরেছেন। সাধ্যের সাথে মিলছিল না কাঙ্খিত বস্তু। অনেক দর কষাকষির পর ১২ ইঞ্চির একটি ফ্যান কিনেছেন। স্বাভাবিক সময়ে ১২০০ টাকায় কিনলেও এখন তাকে ৪ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।
আযমখান কর্মাস কলেজের শিক্ষার্থী তাইফুজ্জামান খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রচন্ড গরম পড়েছে। তারপর চলছে তীব্র লোডশেডিং। গরমে লেখাপড়া করা দায় হয়ে পড়েছে। গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি একটি চার্জার ফ্যান কিনেছেন। ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা জানিয়ে পাঁচশ’ টাকার ফ্যান ১ হাজার টাকা নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি দেখার কেউ নেই। যে যার মতো করে ব্যবসা করে যচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীক মনোভাব থেকে বাঁচতে চাই।
খুলনা গেজেট /এমএম