‘শ্রাবণের আজকে ১৭ তারিখ। বর্ষাকাল প্রায় শেষ। তবুও বৃষ্টি নেই। ক্ষেত-খামারের আশেপাশের ডোবা, নালা ও জলাশয়ে পানি নেই। যেটুকু পানি আছে তা দিয়ে পাট পচানো সম্ভব নয়। জমিতে পাটগাছ বড় হয়ে পানির অভাবে পাতা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়ায় বহুকষ্টে ফলানো পাট জাগ দিতে পারছি না। পাট পচানো নিয়ে আছি বড় দুশ্চিন্তায়।’
সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে এমনটাই বলেছেন উপজেলার বড়গুনি বাজারের বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ী ও বড়বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাসুদ সরদার।
মাসুদ সরদারের মত বিপাকে পড়েছেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কয়েক হাজার পাট চাষি।’
সোনালী আঁশ পাট দামে-দরে তাঁর পুরানো ঐতিহ্যকে আবারও কৃষকের মাঝে তুলে ধরেছে। পরপর কয়েক বছর দাম ভাল থাকায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। তাই অন্যসব ফসলের পাশাপাশি এ বছর পাটের চাষ বেশী হয়েছে।
জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন করতে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর প্রতি বিঘা জমি থেকে ১২-১৪ মণ পাট উৎপাদন হবে। বর্তমানে প্রতিমন পাট ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নানা কাজে খড়ির (পাটকাঠি) ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়ে থাকে। সে হিসেবে সময়মত ঘরে পাট তুলতে পারলে চাষিরা খুব লাভবান হবেন। আর পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারলে অনেক চাষি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উপজেলার বড়গুনি গ্রামের পাট চাষিরা জানান, এ বছর তাঁরা অনেক আশা নিয়ে পাটের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। উপজেলার অধিকাংশ পাট চাষির তাঁদের মত একই অবস্থা।
গত বছর দাম বেশি পাওয়ায় চলতি বছর পাটের আবাদে ঝুঁকে পড়েন। পাট আবাদ ভালো হলেও এখন পাট কাটা ও জাগ দেয়া নিয়ে তাঁরা মহাবিপদে পড়েছেন। উপযুক্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেয়া খুব সমস্যা হচ্ছে। তাই বহুকষ্টে উৎপাদিত পাট নিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অসীম দাশ জানান, চলতি বছর এ উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে মোট ২ হাজার ১০০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে কৃষকেরা পাট পচাতে পারছেন না। কম পানিতে কিছু পাট জাগ দিলেও তার ফলাফল ভাল হচ্ছে না। কারণ বেশি পানিতে পাট পচাতে পারলে পাটের আঁশ সাদা পাওয়া যায়। তাতে কৃষকেরা দাম বেশি পান।
খুলনা গেজেট/ এস আই