রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)। ফলে জাতিসংঘের আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানিতে আর কোনো বাধা থাকলো না।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৩টায় রায় পড়ে শোনান আইসিজে সভাপতি বিচারপতি জোয়ান ই ডনোগু।
গত ফেব্রুয়াারিতে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আদালতে মিয়ানমারের আপত্তির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আইসিজে সভাপতি বিচারপতি জোয়ান ই ডনোগু রায়ে বলেন, ‘২০১৯ সালে গাম্বিয়া যে মামলার আবেদন করছে সেটি গ্রহণযোগ্য।’
আদালতের বাইরে রোহিঙ্গাদের সমর্থন জানিয়ে জড়ো হন অনেকে। তারা ব্যানার হাতে রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেন।
২০২১ সালে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক সরকার দেশটিতে ক্ষমতা দখলের পর ওই মামলার শুনানি প্রশ্নে আপত্তি জানায়।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ শুরু হয় ১৯৭৮ সাল থেকে। তখন বাংলাদেশে আসা তিন লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে আড়াই লাখকে মিয়ানমার পরে ফিরিয়ে নিয়েছিল। ১৯৯২ সালে আসে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৭ রোহিঙ্গা।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ২৪টি সীমান্ত চৌকিতে একযোগে হামলা চালানো হয়। শুরু হয় অপরাধী দমনের নামে অভিযান। পরের দিন ২৫ আগস্ট থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এর পর থেকে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় উখিয়া-টেকনাফে।
প্রায় ১৬ বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে একটি নতুন সমঝোতা স্মারকে একমত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তিতে দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত যেতে পারেনি।
এমন প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয় গাম্বিয়ার করা মামলায়।
ক্ষমতা গ্রহণের এক পর্যায়ে এ নিয়ে আপত্তি তোলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমার দাবি করে, গাম্বিয়ার কোনো নাগরিক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় তাদের পক্ষে এমন অভিযোগ তোলার সুযোগ নেই।
সেসময় গাম্বিয়া জানায়, দুই বছর আগেই আদালত গাম্বিয়ার মামলা করার অধিকারের বিষয়টি নিয়ে নিষ্পত্তি করেছে।
চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি এসব অভিযোগ ও মিয়ানমারের দাবি নিয়ে শুনানি শুরু হয় আইসিজেতে। শুনানি হয় মোট চার দিন।
খুলনা গেজেট / আ হ আ