খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) খন্দকার লাবনী আক্তারের গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ভোররাতে মাগুরার শ্রীপুর থেকে এই পুলিশ কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, পারিবারিক কলহের কারণে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে খন্দকার লাবনী বুধবার দিনগত রাতে আত্মহত্যা করেন আর রাত শেষে অর্থাৎ ভোরে কনস্টেবল মাহমুদুল আত্মহত্যা করেন। ভোরে কনস্টেবল মাহমুদুল ডিউটি শেষে ভোরে ব্যারাকে ফেরেন। তারপর সবাই শটগানের গুলির শব্দ শোনেন। ছাদে গিয়ে দেখা যায়, মাহমুদুল পড়ে আছেন। তাঁর থুতনি দিয়ে গুলি ঢুকে মাথায় লেগেছে।
জানা যায়, লাবনী যখন খুলনা ডিএসবির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন কনস্টেবল মাহমুদুল খুলনায় খন্দকার লাবনীর দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় অন্য কোনো কারণ আছে কি না তা এখনো জানা যায়নি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ নিহত পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এডিসি খন্দকার লাবণীর দেহরক্ষী ছিলেন। দেড় মাস আগে তাকে বদলি করে মাগুরায় আনা হয়।
মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মর্গের সামনে দুপুর দেড়টার দিকে কথা হয় মাহমুদুল হাসানের দুলাভাই মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাহমুদুল মাঝে মাঝে বলত খুলনায় তার চাকরি করতে ভালো লাগছে না। তার অন্যত্র বদলি হওয়া প্রয়োজন। সে কারণেই মাহমুদুল বদলি হয়ে মাস দেড়েক আগে মাগুরায় আসে।’
পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবণীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি। আত্মহত্যার কারণও নিশ্চিত করতে পারেননি মাহমুদুল হাসানের ভগ্নিপতি।
লাবনীর পারিবারিক কলহের কথা স্বীকার করেন লাবনীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আজম। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, “বিশ্বাস-অবিশ্বাস, টাকা-পয়সাসহ সংসারের নানা বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। তবে এসব কলহ নিয়ে কখনও কোনো ধরনের মিমাংসা বৈঠক করতে হয়নি। ওরা নিজেরাই মিটিয়ে নিতো। মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই একটু জেদি ছিল। ও যা বলতো, তাই ছিল শেষ কথা। যদি বলতো হবে না, তো সেটা হবে না। রেগে গেলে অস্বাভাবিক হয়ে যেত।”
তার ধারণা, পারিবারিক কলহের কারণেই লাবনী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তবে, পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নন বলে জানান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আজম জানান, লাবনীর স্বামী তারেক আব্দুল্লাহ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাকে প্রতি দুই মাস পর পর ভারতের চেন্নাইয়ে যেতে হয় চেকআপের জন্য। গত ১৭ জুলাই তারেক চেন্নাইয়ের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। তাকে বেনাপোল সীমান্তে পৌঁছে দিয়ে সেই গাড়িতে করেই সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা থেকে লাবনী তার দুই মেয়েকে নিয়ে মাগুরার শ্রীপুরের সারঙ্গাদিয়ায় নানা বাড়িতে আসেন। লাবনীর মা-বাবা সেদিন ওই বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।
তবে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি নিহত লাবনীর স্বামীর সাথে। তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই