বয়স বাড়লেই চুল পাকবে এমন কথা এখন আর খাটে না। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় কাজের ধরনের বদলে চাপ বাড়ছে মনের ওপর। ফলে অনেকেরই কম বয়সে চুল পাকতে দেখা যাচ্ছে। পরিবেশদূষণ এবং আধুনিক জীবনযাত্রার স্ট্রেসের কারণে অল্প বয়সেই চুল পাক ধরছে। একবার চুল পাকতে শুরু করলে খুব দ্রুত মাথার বাকি অংশও সাদা হতে থাকে। তাই মাথায় সাদা চুল দেখা গেলেই সতর্ক হন।
আমাদের সবার মধ্য়েই সুন্দর ও ঘন কালো চুলের স্বপ্ন থাকে। কিন্তু সবার সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না। যদিও চুল কম বা বেশি হোক, আপনি সুন্দর। সবার সৌন্দর্যই ইউনিক ও প্রশংসা করার মতো। কিন্তু যাদের সত্য়িই লম্বা ঘন চুল পাওয়ার ইচ্ছে থাকে, তারা নানা ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকেন। তাও হয়তো কোনো কাজ হয় না।
এ ছাড়াও অনেকে অল্প বয়সেই চুল পেকে যাওয়া বা চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন। তারাও এই ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিতে পারেন। চুলে শুধু জবা ফুলের ব্যবহারেই সমাধান পাবেন। জেনে নিন কোন উপায়ে ব্যবহার করতে হবে জবা ফুল। তার আগে জেনে নিন জবা ফুলের গুণ সম্পর্কে।
জবা ফুলের গুণ
অনেকের বাড়িতে এ ফুল গাছ দেখা যায়। জবা বিভিন্নরকম হয়। এ ফুলের চাহিদাও আছে। কিন্তু এ ফুল আসলে কতটা উপকারী, তা কি আপনি জানেন? শুধুই শরীর সুস্থ রাখার জন্য নয়, বরং আপনার চুল ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জবা ফুল।
জার্নাল অব এথনোফার্মাকোলজির এক গবেষণা অনুসারে, টাক পড়ার সমস্যার সমাধান হতে পারে জবা ফুল। এতে আছে অ্যামিনো অ্যাসিড। এটি চুলের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অ্যামিনো অ্যাসিড কেরাটিন তৈরি করতে সক্ষম। তাই চুলের ওপর কেরাটিনের প্রলেপ ঠিক রাখে। চুলকে মজবুত করে ও চুলে ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যা দূর করে।
চুলের যত্নে যেভাবে জবা ফুল ব্যবহার করবেন
চুল ভালো রাখার জন্য নানাভাবেই আপনি জবা ফুল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আপনি জবা ফুলের পাপড়ি চুলের যত্নে কাজে লাগাতে পারেন। জবা ফুলের পাপড়ি শুকিয়ে গুঁড়ো করেও রাখতে পারেন। সেটি চুলের যত্নে কাজে লাগাতে পারেন। এ ছাড়াও চুলের যত্নে আরও অনেক কিছুই ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের নানা সমস্যা সমাধানে জবা ফুলের তেলও একইভাবে কার্যকরী। জবা ফুল চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চুলের ঘনত্ব বাড়ায়। চুল পড়া কম করে। তাই মাথায় টাক পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয় না। বা চুল পাতলা হয়ে যায় না। চুলের অকালপক্কতা রোধ করে। এক ঢাল ঘন কালো কুচকুচে চুল পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করে জবা ফুল। চুল থাকে জেল্লাদার। চুল পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পায়। খুশকির সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। চুলের ডিপ-কন্ডিশনিং করে।
চুল কালো করতে জবা ফুল
কয়েকটা জবা ফুল ও তার পাতা নিন। এই দুই উপাদান ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি হবে। এই মিশ্রণে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে দিন। এবং তার সঙ্গে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে দিতে হবে। স্নান করতে যাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এটি মাথায় মেখে নিন।
তারপর ৩০ মিনিট শাওয়ার ক্যাপ পরে অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। কুচকুচে কালো চুল পেতে সপ্তাহে অন্তত তিন-চারদিন এই পদ্ধতি মেনে চলুন।
মাথায় টাক পড়লে যা করবেন
নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করবে এ হেয়ার মাস্ক। ২-৩ টেবিল চামচ আদার রস নিন। ২-৩ টেবিল চামচ জবা ফুলের পাউডার নিয়ে নিন।
এ দুই উপাদান একটি পাত্রে নিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। ঘন মিশ্রণ তৈরি হবে। চুলে এবং চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিন এই হেয়ার প্যাক। ২৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর সাধারণ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দু’বার এ হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। এই হেয়ার মাস্ক চুল মজবুত করবে। একইসঙ্গে নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করবে।
দ্রুত চুল লম্বা করতে
হেয়ার মাস্কটি আপনার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এবং আপনার চুলকে মজবুত করবে। আপনার প্রয়োজন ২-৩ টেবিল চামচ জবা ফুল এবং পাতার গুঁড়ো। এই পাউডার আপনি বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন। আবার কিনতেও পারেন। এর সঙ্গে মিশিয়ে দিন ৯ টেবিল চামচ আমলকি পাউডার। আপনার চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্ব অনুযায়ী পরিমাণে সামান্য ফারাক পড়তেই পারে। পানি নিন।
জবা ফুল ও পাতার পাউডারের সঙ্গে আমলকির পাউডার মিশিয়ে নিন। পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে একটি ঘণ মিশ্রণ তৈরি করুন। জবা ফুলের হেয়ার মাস্ক তৈরি হয়ে যাবে। এটি চুলে, স্ক্যাল্পে, গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নেবেন। আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট রেখে দিন। অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার ব্যবহার করুন।
খুলনা গেজেট/ এস আই